# শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি…………………………….
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন ডোবা নামে এক এনজিও’র পরিচালক। আর এফডিআরের টাকা চাইতে গিয়ে নারী নির্যাতনের মামলার শিকার হয়েছেন ৭জন গ্রাহক। চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশন (পিএফ)।
এদিকে, নারী নির্যাতনের শিকার এনজিও’র গ্রাহক মনাকষা আনক কামিল মাদ্রাসার পিয়ন ও খড়িয়াল গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন, হায়রে আমাদের দূর্ভাগ্য যে লাভের আশায় এনজিওতে এফডিআর খুলে ৪ লাখ ৩০ হাজার জমা দিয়েছি। লাভ তো দূরের কথা মূল টাকা চাইতে গিয়ে আমি সহ ৭জন সাজানো নারী নির্যাতনের মামলায় দীর্ঘদিন যাবত হয়রানী হচ্ছি।
অন্যান্য আসামীরা হলেন, আফতাব উদ্দিন মাস্টার, সামায়নতুল্লাহ, হাবিবুর রহমান, ফরজুন আলী, আলকেশ আলী, মিজানুর রহমান ও মন্টু। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আমাদের ১৩০জন এফডিআর গ্রাহকের প্রায় ২কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় শাখা ব্যবস্থাপক সোহেলের সহযোগিতায় ডোভা (আগের দেশ নামে ছিল) এনজিও পরিচালক জাইরুল ইসলাম। এ টাকা চাইতে গেলে পরিচালক জাইরুলের সাথে আতাঁত করে সোহেল আমাদের ওপর পাল্টা মামলা করে হয়রানী করছে। তিনি আরো জানান, প্রতি লাখে মাসিক ১৫’শ টাকা হারে এফডিআর করলে তারা প্রথম মাস লাভের টাকা আমাকে দিয়েছে। পরে তারা অফিস ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু সাইফুদ্দিন নয়, এলাকার আব্দুর রশিদের স্ত্রী রেহেনা বেগমের ৫০ হাজার টাকা, পারচৌকা গ্রামের একরামের ছেলে গোলাপের ৬ লাখ টাকা, খড়িয়াল গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে তোফিকুল ইসলামের ২লাখ ৮০ হাজার টাকা, মনাকষার গৌতম নাপিতের ৫লাখ টাকা, পারচৌকা গ্রামের মালেকের স্ত্রীর ১১লাখ টাকা সহ মোট ১৩০জন এফডিআর গ্রাহকের প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে।
তারা জানান, এফডিআর ছাড়া আরো প্রায় ৬’শ জন সাধারণ গ্রাহকের ২০/২৫লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। তবে প্রায় ১ শ’৫০জন সদস্যের কাছে তাদের বিনিয়োগ ছাড়া আছে প্রায় ৬৫লাখ। যে গুলো তারা গোপনে গোপনে আদায় করছে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র জানায়, শুধু মনাকষা নয়, ডোভার প্রায় ১৪টি শাখা মধ্যে বেশীর ভাগ শাখা গুটিয়ে নিয়ে এভাবেই গ্রাহকের প্রায় ২৫/৩০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে আছে।
অন্যদিকে অফিসের জন্য ভাড়া দেয়া ঘরের মালিক মাহবুব আলম এম জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে এ এনজিওটি পলাতক রযেছে। তখন থেকে আমাকে ঘরের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল কিছুই দেয়নি। এমনকি অফিসও ছাড়েনি। তিনি জানান, ২০১৭সালে ১ হাজার ৮শ’ টাকা মাসিক ভাড়ার চুক্তিকে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে অফিসের কাজ শুরু করে। ২০১৯সালে আরো ১টি ঘর সহ মাসিক ৩ হাজার ৩’শ টাকা ভাড়া চুক্তি করে ১লাখ টাকা জমানত দেয়। বর্তমানে শাখা ব্যবস্থাপক সোহেলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে জানাই চাকুরী ছেড়ে দিয়েছি। আমার কোন দায়দায়িত্ব নেই। তাই নিরুপায় হয়ে আমি ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে ১জন ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে তাদের মালামালগুলো অন্য ঘরে গুছিয়ে রেখে অপরজনকে ঘর দুটি ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এব্যাপারে শাখা ব্যবস্থাপক সোহেল বলেন, আমি চাকুরী ছেড়ে দিয়েছি। তাই আমার কোন দায়দায়িত্ব নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন যে ডোভা নামে এনজিও পরিচলাক জাইরুল ইসলাম মনাকষা শাখার ১শ’৩০জন এফডিআর ও ৬’শ জন সাধারণ গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। এব্যাপারে পরিচালক জাইরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে তার ০১৭৯৬১২০১০৯ নম্বর বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে এদিকে, পবিত্র ঈদ-উল ফিরতের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশন (পিএফ)। সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন যার নিবন্ধন নং স.সে.অ. নবাব-৪৯৫/১৫ এই এনজিও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের খাসেরহাটে প্রধান কার্যলয় করে ২০১৪ সাল থেকে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও হঠাৎ করে ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে এই এনজিওটি পরিচালক বিনোদপুর ইউনিয়নের রসুনচর গ্রামের মো. আসদাক আলী মাস্টার ও শাখা ব্যবস্থাপন তাঁর ছেলে আশিক রাতের আধাঁরে অফিস গুটিয়ে উধাও হয়েছেন।#