চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি……………………………………………………………….
নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা করে কয়েক বছরে কোটিপতি হয়েছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুল্ক স্থল বন্দর সোনামসজিদ পরিচালনায় নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ওয়্যার হাউজ কিপার পদে কর্মরত একজন কর্মচারী। তার এই উত্থান সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। নিষিদ্ধ মাদক ক্রয় বিক্রয়ে কোটিপতি হওয়া ওই কর্মচারীর নাম তারেক। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদীঘি ধনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, ভারত থেকে আমদানী নিষিদ্ধ মাদক ফেনসিডিল এবং ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাই পথে এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে কয়েক বছরে তিনি এখন কোটিপতি। সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকায় গড়ে তুলেছেন মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য। কিনেছেন কয়েক কোটি টাকায় ১৮টি ট্রাক। যাতে করে তিনি বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি মাদক পরিবহনেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আর অবৈধ অর্থে গ্রামে গড়ে তুলেছেন আলিশান রাজপ্রাসাদ।
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার খুব ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়। এ সময় যশোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসা একটি লবণের ট্রাক তল্লাশি করে ৯৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক। গ্রেফতার করা হয় ট্রাকের চালক ও হেলপারকে। পরে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক ও গাঁজার মালিক তারেক এবং শহিদুল ইসলাম টাগু নামে আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পারস্পরিক যোগসাজশে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আর বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ মাদককারবারীদের গ্রেফতারের পরপরই বেরিয়ে আসে মাদক সম্রাট তারেকের উত্থানের গল্প। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তারা হলেন, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ট্রাক চালক মো. মিঠুন (৩০), চককীর্তি ইউনিয়নের কালপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আল আমিন (১৯), শাহাবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদিঘী ধনীপাড়ার আব্দুল আলিমের ছেলে মো. তারেক (২৭) এবং বালিয়াদিঘী দক্ষিণপাড়ার জালাল উদ্দীনের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে টাগু (৩০)।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সোনামসজিদ স্থল বন্দর পরিচালনায় নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ওয়্যার হাউজে কিপার পদে কর্মরত থাকায় পানামা ইয়ার্ডে অবাধ বিচরণ ছিলো তারেকের। সেই সুযোগে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে ২৭ বছর বয়সী তারেককে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকায় মাদকের একটি বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্যের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তার নিজ ট্রাকে করে ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতেন।
এছাড়া কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসতেন গাঁজার চালান। পরে বিভিন্নভাবে আশে-পাশের জেলায় ছড়িয়ে দিতেন। তার নিজস্ব ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের আড়ালে মাদক কারবার চালিয়ে যাওয়ায় ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, তারেক ২০১১ সাল থেকে ওয়্যার হাউজ কিপার পদে ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। তার নানান অপরাধের কারণে মৌখিকভাবে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কারও কথায় কর্ণপাত করেননি। সম্প্রতি গাঁজাসহ আটক হওয়ার পরদিন তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। #