সবুজনগর অনলাইন ডেস্ক…………………………………………………………
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারি ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর উর্ধেব স্থান দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদেরকে জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ জনগণের সেবক হিসেবেই নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমি চাই জনগণের সেবা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং উন্নত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪তম, ১২৫ তম এবং ১২৬ তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের সমাপণী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, পাকিস্তান আমলে কোনো বাঙালী একমাত্র কর্ণেল ছাড়া সচিব, জেনারেল ও মেজর জেনারেল হতে পারতো না। তিনি বলেন, ‘এখন আপনাদের (সরকারি কর্মকর্তা) মনে রাখা উচিত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সব কিছুই হতে পারছি। সে কথা মনে রেখেই সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলানয়তন শাহবাগে অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে ৩টি ব্যাচের ১০৩ জন কর্মকর্তার হাতে সনদ তুলে দেন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা নবীন অফিসার তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি যখন কোন এলাকায় কাজ করেন তখন সেই এলাকার উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখার সুযোগ পান।
প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দেন, কোথাও কাজে নিযুক্ত হলে বিভিন্ন জন বিভিন্ন দেন দরবার নিয়ে আসবে তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সঠিক পরিকল্পনানুযায়ী এগুতে হবে। তাহলেই আমরা সঠিকভাবে উন্নতি করতে পারবো। আমি চাই আমাদের নবীন অফিসাররা সেভাবেই ব্যবস্থা নিবেন। কারণ, দেশের মানুষের কল্যাণ করার জন্যই বাপ-মা-ভাই হারিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন এবং জাতির পিতা যে ভাগ্যহত মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তাদের মুখে তিনি হাসি ফোটাবেন-এটাই তাঁর লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া অবস্থা থেকে একরকম জোর করে দেশে ফিরে সমগ্র বাংলাদেশ তিনি চষে বেড়িয়েছেন। আর দেখেছেন হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষের সারি, পায়ে ন্যূনতম স্যান্ডেলটা নেই, ছিন্ন বস্ত্রের মানুষ।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আজকের নবীন কর্মকর্তারা যখন বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে যাবেন তখন এই বিষয়টার দিকেই লক্ষ্য রাখবেন যে, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলেন, সেখানেই তৃপ্ত। যতটুকু দিয়ে আসতে পারবেন সেটাই মানুষ মনে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ তুলে ধরে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের আরো জনসেবায় নিবেদিত প্রাণ হবার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আমি দেখেছি আমার মা-বোনরা এক টুকরো কাপড়ের অর্ধেক শুকাচ্ছে অর্ধেক পরে আছে। প্রতি বছর মঙ্গা লেগে থাকতো আমরা ছুটে গেছি, লঙ্গরখানা খুলেছি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সরকার কি করছে সেদিকে দেখিনি। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং একাডেমির রেক্টর (সচিব) মোমিনুর রশিদ আমিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ১২৪, ১২৫ ও ১২৬ তম ব্যাচে শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টরস পদক লাভকারি তানিয়া তাবাসসুম, মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও ফারহানা নাসরিন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে দেয়া ভাষণের একটি সংকলণের মোড়কও উন্মোচন করেন। বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির কর্মকান্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে যেমন গবেষণার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, দেশকে চেনা এবং মানুষের কল্যাণেও কাজ করতে হবে। কারণ, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যত বেশি হবে ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে আমাদের দেশে শিল্পায়নও বাড়বে। আর শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, শিল্পায়ন যেখানে হবে এরসঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আবার বর্জ্য থেকে সার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। সাথে সাথে মানুষকেও সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি এই উদ্দেশে যে, যত্রতত্র কেউ যেন কোন শিল্প গড়ে তুলতে না পারে। কারণ, আমার কৃষিজমি বাঁচাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির অভিঘাতের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে যে সব জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, তার দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলোও হিমসিম খাচ্ছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে একটু সুযোগ দিলে বা বোঝাতে পারলে তারা কিন্তু অসাধ্য সাধন করতে পারে। যেমন জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছেন ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রুর মোকাবিলা কর’-এদেশের মানুষ কিন্তু তা করেছে। বিজয় এনে দিয়েছে। এখন আমরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করবো। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি সেখান থেকে দেশকে আমরা উন্নত করবো।
‘এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। আমি জানি, উন্নত দেশগুলোর অবস্থা। এমনকি আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ডসহ প্রত্যেকটা দেশ এখন অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না, খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেখানে সব জায়গায় রেশনিং করে দেয়া হয়েছে। এমন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের করনীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বহু আগে থেকেই এটা বলে যাচ্ছি যে, এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। কারণ, আমাদের নিজের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আমাদের শিল্পায়ন দরকার এবং দেশের মানুষের খাদ্যে এবং পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৪৮ সালের পর থেকে জাতির পিতার আত্মজীবনী এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন, বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক পাকিস্তানের গোয়েন্টা রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর সম্পাদিত বইয়ের সিরিজটিও নবীন প্রশানসিক কর্মকর্তাদের পড়ার আহবান জানান। এতে তারা দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশকে নতুন করে চিনতে এবং দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন একটা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি। কাজেই সেই অবস্থায় আমরা যদি নিজেরা দাঁড়াতে পারি সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়। সে জন্য আমাদের সবাইকে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। কৃচ্ছতা সাধন করেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে।#