বিশেষ প্রতিনিধি…………………………………………………………………
এক বছর মেয়াদের কমিটি দিয়ে দীর্ঘ আট বছর চলে বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগ। কমিটিতে থাকার ইচ্ছে থাকলেও দীর্ঘ সময় কমিটি চলমান থাকার ফলে অনেকের তা আর সম্ভব হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করে গেছেন। উপজেলা-ইউনিয়ন কমিটিতে থাকা অনেক নেতাদের বিয়েও হয়েছে। কেউ সন্তানের বাবাও হয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী জেলা অর্ন্তগত বাঘা উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম (রানা) ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন (অমি) স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাঘা উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কমিটি বিলুপ্তের সাড়ে দশ মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠন করাও হয়নি। বিলুপ্ত করা কমিটি আট বছর আগে গঠন করা হয়েছিল।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মাইনুল ইসলাম মুক্তাকে সভাপতি ও নাজমুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। দুই সদস্যর কমিটি দিয়ে চলে ১ বছর। ২০১৫ সালে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৮ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে মাইনুল ইসলাম মুক্তাকে অব্যাহতি দিয়ে কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান(সোহাগ)কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগ এমন গর্তে আগে কখনও পড়েনি। এক বছর মেয়াদের কমিটি বাতিলের দাবি তুলেও কোন কাজ হয়নি।
এক বছরের কমিটি দীর্ঘদিন চলমান থাকায়, দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যকে পেটানোর ঘটনাও ঘটেছে। লাঞ্ছিত হওয়ার তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন চলছে কমিটি শুন্যে ছাত্রলীগ। পদ প্রত্যাশি গোলাম রাব্বি, জাহিদ হোসেনসহ অনেকেই বলেছেন, এক বছর মেয়াদের কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর চালানোর কারণে তারা কোনভাবেই পদে আসতে পারছেননা।
তারা জানান, কমিটি বিলুপ্তির পর, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। অনেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসার চিন্তা ভাবনা করেছিল। কিন্তু অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছেনা। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম মুক্তা জানান, এখন কমিটি ছাড়াই চলছে ছাত্রলীগ। সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, কিন্তু কমিটি গঠনের ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছেননা।
বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) সোহানুর রহমান (সোহাগ) জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পরে জেলার নেতাদের কাছে পুর্নবহালের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করায় আগের অবস্থায় রয়ে গেছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, গত ২৭ মে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বর্তমান কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন ।
ছাত্রলীগের রাজশাহী জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন,আমার পরবর্তী সময়ে সভাপতি হিসেবে সাকিবুল ইসলাম(রানা), সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাকির হোসেন (অমি) দায়িত্ব পান। তাদের সময়ে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে জেলা কমিটি থেকে তাদের একজনকে বহিস্কার, অরেকজনকে অব্যহাতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জেলাতেও কমিটি নেই।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি (বহিস্কৃত) সাকিবুল ইসলাম(রানা) বলেন, দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ৮ বছর আগেই সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সম্মেলনের মাধ্যমে সক্রিয় ছাত্রদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করতে গিয়ে নিজেই ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছি। জেলা কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের জেলা কমিটির আরেক সাবেক সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের বর্তমান সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী এক বছর পর পর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের কথা। তবে নানান কারণে মেয়াদ পার হয়ে যায়। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারন সম্পাদক শেখ ওয়ালী হাসান ইনানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। পরে সাদ্দাম হোসেনের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা কমিটি। বর্তমানে জেলাতেও কমিটি নেই। প্রয়োজনে সুপারিশ চাওয়া হলে দেওয়া হবে।#