# নিজস্ব প্রতিবেদক…………………………………………….
সারাদেশের ন্যায় বাগমারা জুড়ে মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া। কিছুদিন আগে উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকা থেকে জুয়া খেলার অভিযোগে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে জুয়া খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তারপরও থেমে নেই জুয়াড়িদের কার্যক্রম।
স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কিশোর, তরুণ, যুবক এমনকি মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিরাও খেলছেন সর্বনাশা এই খেলা। ছাত্র, ব্যবসায়ী, দিনমজুর, ভ্যানচালক সহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ জড়িয়ে পড়েছে এর সাথে।
অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন সাইট ও অ্যাপসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে 1xbet। এটি রাশিয়া ভিত্তিক অনলাইন জুয়ার একটি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস। এখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিগব্যাশ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলোতে বাজি ধরা যায়।এর পাশাপাশি এখানে রয়েছে ক্যাসিনোর সবধরনের জুয়া খেলার ব্যবস্থা।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে 1xbet এর এজেন্ট।জুয়া খেলার জন্য একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর বা ই-মেইলের মাধ্যমে এই বেটিং সাইট বা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ওই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি করে ব্যালেন্স যোগ করা হয়। সরাসরি বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে 1xbet এজেন্টরা গ্রাহকদের ওয়ালেটে ব্যালেন্স দিয়ে দেয়। জুয়ায় জিতার পর এই এজেন্টদের মাধ্যমেই টাকা ওঠানো যায়।এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর, হামিরকুৎসা, শিকদারী, হাটগাঙ্গোপাড়া, মচমইল, মাদারিগঞ্জ-মোহনগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রকাশ্যে খেলা হচ্ছে জুয়া। ভবানীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন চায়ের স্টল, হেলিপ্যাড ও টিএন্ড টি মাঠের আশেপাশে, ভবানীগঞ্জ সরকারি কলেজের পিছনের দিঘি গুলোর পাড়ে, রাস্তা ও নদীর ধারে বসে দলবদ্ধভাবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জুয়া খেলার দৃশ্য দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় 1xbet এর দু’ জন এজেন্ট রয়েছেন। তাদের হয়ে আরো অর্ধডজন ব্যাক্তি কাজ করছে। এরমধ্যে পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের হেলাল, নয়ন, জহিদ অন্যতম বলে জানা গেছে।জুয়াড়িদের ওয়ালেটে ব্যালেন্স দেওয়া, টাকা উইথড্র, নতুন জুয়াড়ি তৈরি ও তাদের একাউন্ট খুলে দেয়ার মতো কাজ করছে এরা। এদের কে নিয়ন্ত্রন করে রাজশাহী মহানগরীর বাবু (জুয়াড়িদের কাছে এই ছদ্মনামে পরিচিত) নামের এক ব্যক্তি। আমাদের সোর্সের মাধ্যমে বাবুর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কথা বলতে চাননি তিনি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, তিনি ২০২১ সালেই জুয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে বাগমারার জুয়ার সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে পূর্বপরিচিত দুয়েকজন ফোন করলে হয়তো এমনিতেই কথাবার্তা বলেছেন ।
জুয়ায় কি পরিমান টাকার লেনদেন হয় জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবানীগঞ্জ পৌরসভার একজন এজেন্ট জানান প্রতিমাসে প্রায় তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা লেনদেন করেন। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসার আড়ালে এই কাজ করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জুয়ায় আসক্তদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ মধ্যে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। অনলাইন ক্লাস শুরু হলে তাদের হাতে হাতে স্মার্টফোন হয়েছে। হঠাৎ করে বেড়ে গেছে তাদের টাকার চাহিদা। শিক্ষার্থীরা জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে গোপনে বাসার দামি জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি করার ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
ভুক্তভোগী এক অভিভাবক জানান, হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে কলেজ পড়ুয়া সন্তানের টাকার চাহিদা।রাত জেগে মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করলে অনলাইনে পড়ালেখা করছে বলে জানায়। সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ছেলে জুয়া খেলা শুরু করেছে। ঘটনা জানতে পেরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।ছেলের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় বেড়ে গেছে এলাকায় ছিচকে চুরির ঘটনা। জুয়ার প্রসারে এরকম হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোস্তাক আহমেদ জানান, অনলাইনে জুয়া খেলার কথাবার্তা তিনিও শুনেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।#