# শ্যামনগর থেকে জি এম ইমরান হোসেন: আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষ ১৪৩১ বিদায় নিয়েছে, আজ থেকে শুরু হলো নতুন বাংলা বছর ১৪৩২। পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। বাঙালির হৃদয়ে প্রকৃতি এক অদৃশ্য সুরে বাঁধা। ষড়ঋতুর লীলাভূমিতে ঝড়-বৃষ্টির দামামা বাজিয়ে, ধূলাবালির মেঘ উড়িয়ে, বজ্রের গর্জনে কাঁপিয়ে পহেলা বৈশাখ আসে এক নবজাগরণের প্রতীক হয়ে। এবার নতুন বছর এলো এক নতুন ভোরের বার্তা নিয়ে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজয়ের অন্যরকম এক আবহেই এলো এবারের পহেলা বৈশাখ। এ বৈশাখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছর শুরু করার নয়, এ একটি নতুন সময়ের সূচনা।
স্বৈরশাসকের পতনের পর তারই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন বছরে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে একটি আলোকিত ভবিষ্যতের। চারদিকে উৎসবের রঙ, মুখে মুখে শুভেচ্ছা, কিন্তু এর মাঝে রয়েছে এক আশার বার্তা। সে বার্তা বদলে যাওয়ার, নতুন দেশ গড়ে তোলার। বাংলা নববর্ষে এদেশের মানুষের দেহমনে এক অনির্বচনীয় শিহরণ জাগে। হৃদয় স্পন্দিত হয় এক গভীর আবেগ ও অনুভূতিতে। একই সাথে ফেলে আসা বছরের অসংখ্য স্মৃতি মানসপটে ভেসে ওঠার পাশাপাশি আগামী দিনের আশা আকাঙ্খা ও স্বপ্ন দোলা দেয়।
বাংলা নববর্ষ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে এক সৃজনশীল মৌসুম হিসেবে। বাংলা গদ্য, কাব্য ও সংগীতের শাখা অসামান্য সমৃদ্ধি ও গতি পেয়েছে নববর্ষ উৎসবকে কেন্দ্র করে। তারই ধারাবাহিকতায় দাসপাড়া কর্তৃক আয়োজিত প্রতি বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে আমরা থাকি। কিন্তু এবছর ব্যতিব্যস্ত থাকার কারণে স্বল্পপরিসরে আমরা উৎসব পালন করি। এবং পান্তা চিংড়ি খেয়ে আমরা দিনটি শুরু করে থাকি। এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল জয়নগর দাসপাড়া।
সভাপতিত্ব করছিল শান্তি দাস , এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করছিল স্বপন দাস সহযোগিতায় ছিল সাগর কুমার। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলতঃ মুসলিম বাদশাহ আকবরের সময় থেকেই। মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে। পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে।
কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিলো হালখাতা। এটি পুরোপুরি একটি অর্থনৈতিক বিষয়। গ্রামেগঞ্জে ও নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরোনো হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন।
চিরায়ত এ অনুষ্ঠানটি আজো পালিত হয়। নববর্ষের দিনটিতে অনেকে পান্তা ইলিশ খান। তাই হোটেল রেস্তোরাঁসহ অন্যানৗ মৌসুমের খাবারের দোকান পান্তা ইলিশের পশরা সাজায়। অনেক নরনারী বিশেষ করে তরুণ তরুণী নতুন পোশাক পরিধান করেন, নববর্ষের কার্ড ও উপহার বিনিময় করেন। হস্ত ও মৃৎশিল্পের নানা আইটেম বাজারে আসে। আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। এভাবে বাঙালীর জীবনে এক নতুন সওগাত বা উপহার নিয়ে আসে বাংলা নববর্ষ।
এছাড়া বছরের প্রথম দিনটিকে আরো উৎসবমুখর করে তোলে বৈশাখী মেলা। বাঙালির আনন্দঘন লোকায়ত সংস্কৃতির ধারক গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় মেলে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী, খেলনা এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্রময় সমারোহ।
আরো থাকে নাগরদোলা, পুতুলনাচ, যাত্রা, লোকজ গানের আসরসহ নানান বিচিত্র বিনোদন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ আনন্দ উৎসবটি এদেশের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে যায়। ওদিকে, এ বছর থেকে বাংলা নববর্ষ বরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি আর থাকছে না। বাংলা নববর্ষের এবারের শোভাযাত্রার নাম হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এতদিন এই শোভাযাত্রা হতো ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে। এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান হচ্ছে-‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এ প্রতিপাদ্যের আলোকে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হবে বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতির রূপ।#