জিয়াউল কবীর:
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ওচিন্তাশীল সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তার বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং একতা রক্ষা করা, যা জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত।
তিনি বলেছেন,সেনাবাহিনীর বা সরকারকে উদ্দেশ্য করে নয়, বরং পুরো জাতির জন্য একটি মেসেজ।যেখানে শৃঙ্খলা, একতা এবং শান্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রথমেই দেশের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, “যদি আমরা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত হই, আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে।” এই বক্তব্যে তিনি দেশের ভেতরে চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতা নিয়ে সতর্ক করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল—যদি আমরা নিজেদের মধ্যে শত্রুতা এবং বিভাজনে জড়িত হয়ে পড়ি, তাহলে তা আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এখানে তিনি দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় একতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
কোনো জাতির অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা সংঘাত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থানকে দুর্বল করে তোলে এবং শত্রুরা সে দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এজন্য তিনি একতাবদ্ধ থাকার এবং শত্রুতা নয়, সহযোগিতার পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, যা হলো—দেশের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (পুলিশ, র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল বা আন্ডারমাইন করে দেশে শৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব নয়।” এর মাধ্যমে তিনি জাতিকে সতর্ক করেছেন যে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ওপর আঘাত বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপপ্রচার দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এই বক্তব্যটি একটি চ্যালেঞ্জও ছিল—যে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সময়, যেন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা হয়। তাদের একতা, দক্ষতা এবং স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক।
তিনি দেশের জনগণকে বিশেষভাবে একতার পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। “আমরা দেশের জন্য কাজ করি, আমাদের কোনো অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা নেই, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো, দেশকে সুন্দর জায়গায় রেখে সেনানিবাসে ফিরে যাওয়া।” এই কথায় তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, সেনাবাহিনী শুধুমাত্র দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে, তাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। তারা কখনো কোনো বিভাজন বা সংঘাতে জড়িত হতে চায় না। এখানে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিবর্তে দেশ ও জাতির কল্যাণে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “নিজেরা হানাহানিতে ব্যস্ত থাকলে, অপরাধীরা তা সুযোগ হিসেবে দেখবে।” এটি একটি পরোক্ষ সতর্কবার্তা ছিল যে, যদি আমরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ি, তখন শত্রুরা আমাদের দুর্বলতা ও অবস্থা বুঝে সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, “এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, যারা শাস্তি পেয়েছে তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।” এই বক্তব্যে তিনি দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
তিনি স্পষ্ট বলেছেন যে, আইন অনুযায়ী যারা অপরাধ করেছেন, তাদের শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত, আর এতে কোনো রাজনীতি বা অপপ্রচার থাকতে পারে না। তবে, তার এই বক্তব্যে যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো—তিনি এখানে একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক আক্রমণকে প্রশ্রয় দেননি, বরং একটি ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যেখানে অপরাধী যে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাবের বাইরে থেকে শাস্তি পাবে।
সেনাপ্রধান সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেছেন, “সরকার ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন করবে, এবং সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।” এতে তিনি সরকারের কার্যক্রমের প্রতি আস্থা রেখেছেন এবং নির্বাচনের সময় নির্ধারণের দিকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার এই বক্তব্যটি ছিল দেশের ভবিষ্যতের জন্য সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ। এখানে তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ওপর বিশ্বাস রেখে, জাতির সামনে এটি নিশ্চিত করেছেন যে সরকার যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের মূল মেসেজ ছিল—দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি, শৃঙ্খলা এবং একতা রক্ষা করা। তিনি জনগণকে সতর্ক করেছেন যে, যদি নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হই, তবে শত্রুরা আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে, যা দেশের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নতির জন্য সকলকে একত্রিত হতে হবে এবং জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে। তার এই বক্তব্য ছিল একত্রিত, শক্তিশালী এবং উন্নত বাংলাদেশের একটি দৃঢ় আহ্বান, যেখানে দেশপ্রেম, জাতীয় একতা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখাই মূল লক্ষ্য বলে প্রকাশ।#