রাইসি তার আজেরি সমকক্ষ ইলহাম আলিয়েভের সাথে তাদের দুই দেশের সীমান্তে একটি বাঁধের যৌথ উদ্বোধনে অংশ নেওয়ার পর তাবরিজে ফেরার পথে হেলিকপ্টারটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
রোববার বিকেলে ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয় দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে চরম আবহাওয়ার মধ্যে। রাইসি’র হেলিকপ্টারের সাথে তাঁর বহরের অন্য দু’টি হেলিকপ্টারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তার বহরের অন্য দু’টি হেলিকপ্টার নিরাপদে ফিরে আসে।
সোমবার ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাঁর মৃত্যুর খবর প্রচার করে বলছে ‘ইরানি জাতির সেবক আয়াতুল্লাহ ইব্রাহিম রাইসি শাহাদাতের সর্বোচ্চ স্তর অর্জন করেছেন।’ এতে তাঁর ছবি দেখানো হয়েছে যেখানে তাঁকে কোরান তেলাওয়াত করতে দেখা যায়।
ইরানের প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাাহিয়ান পূর্ব আজারবাইজানের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের সদস্যরা এবং তাঁর নিরাপত্তা দলের সদস্যসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে সমবেদনা আসতে থাকে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র জুড়ে শহরগুলোতে শোকার্ত লোকরা নিহত প্রেসিডেন্ট এবং তার সঙ্গীদের প্রতি শোক জানাতে বিভিন্ন সড়কে জড়ো হতে থাকে।
সোমবার রাজধানী তেহরানের সেন্ট্রাল ভ্যালিয়াসর স্কোয়ারে রাইসির প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ জড়ো হয়েছিল।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি পাঁচ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে (৬৮) নির্বাচনের আগে অন্তবর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় মিডিয়া পরে ঘোষণা করে যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের শীর্ষ পরমাণু আলোচক আলী বাঘেরি, যিনি আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের ডেপুটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তাবরিজ ত্যাগ করার পর তেহরানে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে রাইসির মরদেহ মঙ্গলবার শিয়া আলেমদের কেন্দ্রস্থল কোমে পৌঁছাবে।
বুধবার সকালে মূল শোক র্যালি শুরু হওয়ার আগে মঙ্গলবার রাতে তেহরানে একটি বিশাল শোক সমাবেশ এবং দোয়া অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে রাইসিকে দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশে এবং পরে তার নিজ শহর মাশহাদে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দাফন করা হবে।
অতি রক্ষণশীল রাইসি (৬৩) ২০২১ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছিল এমন একটি সময় যখন ইরান ব্যাপক বিক্ষোভে কেঁপে উঠেছিল এবং চিরশত্রু ইসরায়েলের সাথে হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়তে হয়েছে।
রাইসি মধ্যপন্থী হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হন। এমন সময় যখন ইরানের প্রতিদ্ব›িদ্ধতাপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়া, ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর সমস্ত সদস্য গাজা যুদ্ধ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের উচ্চ উত্তেজনার সময়ে রাইসি’র এই মৃত্যুতে সমবেদনার বন্যা নেমে আসছে।
ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে যুদ্ধের ফলে উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং এরই ধারাবাহিকতায় তেহরান এপ্রিল মাসে ইসরায়েলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলা চালায়।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় দামেস্কে তেহরানের কনস্যুলেটকে ধ্বংস এবং দুই বিপ্লবী গার্ড জেনারেলকে হত্যা করার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করার পর এর জবাবে ইরান ওই হামলা চালায়।
রাইসির মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে একটি বক্তৃতায় তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সমর্থনের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতির এটি কেন্দ্রবিন্দু।
সোমবার ইসলামী প্রজাতন্ত্র জুড়ে রাইসির অনুষ্ঠানে ইরানের পতাকার সাথে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করা হয়।#বাসস