তিনি প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামিকে কোন আইনে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে? এছাড়া মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনা এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই আইনজীবী নেতা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেন।
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবারও উত্তাল ছিল চট্টগ্রামের আদালত পাড়া। দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। এদিন আদালতে কোনো প্রকার কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। কোনো আদালতে বিচারক এজলাসে বসেননি।
এর আগে বুধবারও একই কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। আজ বেলা ১১টা থেকে আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। দুপুর ১টার দিকে আইনজীবীদের একটি মিছিল আদালত পাড়ার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এসময় আইনজীবী সাইফুল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়। একই সঙ্গে সংগঠনটির বিরুদ্ধে উগ্র কার্যকলাপে অভিযোগ তুলে নানা স্লোগান দেয় আইনজীবীরা।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চিন্ময়কে প্রিজনভ্যানে তোলার পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, প্রিজনভ্যানে চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল-এসব প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
আইনজীবী আলিফকে হত্যার সময়ে ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল’ উল্লেখ করে তাদের কেন ডাকা হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন এই আইনজীবী নেতা। এমনকি এসবের জন্য পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন, নইলে টেনে হিঁচড়ে নামানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘ইসকনের সন্ত্রাসীরা প্রিজন ভ্যান ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। আমরা পুলিশকে নিষ্ক্রিয় দেখেছি। প্রিজনভ্যান ফেলে তারা নিরাপদ স্থানে দূরে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছি এই চিন্ময় দাস প্রিজনভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি। চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল- এর জবাব দিতে হবে। নাহলে পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রামে থাকতে পারবেন না।’
কোন ধারায় চিন্ময়কে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি চিন্ময় দাসকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দিয়েছেন?
জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারকে চিন্ময় কৃষ্ণের ডিভিশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে সাধারণ কয়েদির সাথে রাখবেন। সে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয়। বিগত সরকারে আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে ডিভিশন না দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে।’
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, যতগুলো মামলা হবে এই চিন্ময় দাসকে যেন এক নম্বর আসামি করা হয়। যদি তাকে আসামি না করা হয় আমরা মানবো না। আজ আমরা অত্যন্ত শোকাহত এবং ভারাক্রান্ত। আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। আমাদের চট্টগ্রামের আদালত অঙ্গন ও আশেপাশে এ ধরনের ঘটনা আগে হয়নি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো রয়েছে।’
মানববন্ধনের একপর্যায়ে উপস্থিত আইনজীবীরা আগামী ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে হওয়া মামলার শুনানি না করার দাবি জানান। আইনজীবী নেতৃবৃন্দও এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এ মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাফর ইকবাল, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহাদ মুস্তফা, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ আইনজীবিরা বক্তব্য রাখেন। জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও মানববন্ধনে যোগ দেন। # বাসস