# মোঃ আলফাত হোসেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি………………………………..
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবাধ অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য এ যেন দেখার নেউ কেউ, বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি ভাতা পাস করার পরও কমেনি দুর্নীতি অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য।
সরকার সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে এনে প্রতিটি দপ্তরে সাফল্য অর্জন করে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু,পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণসহ নানা দুর্নীতি অনিয়ম বৃটিশের শাসন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পর্যন্ত চলমান আছে।
সুন্দরবনে প্রতিবছর দীর্ঘ তিন মাস ধরে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হয় পর্যটক ভ্রমণ সহ জেলে বাওয়ালী-মৌয়ালীদের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আর এই নিষিদ্ধ মৌসুমকে পুঁজি করে কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা কর্মচারী টাকার বিনিময়ে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে আসে। যাহা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার। একদিকে বনদস্যুদের অপহরণ, মুক্তিপণ বাণিজ্য, অন্যদিকে বনবিভাগের অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণের কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলে-বাওয়ালীরা।
সরেজমিনে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ-এর কৈখালী স্টেশন বনকর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্যসহ বহুপ্রকার অভিযোগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২৮ শে আগস্ট সোমবার কৈখালী ফরেস্ট স্টেশনের সামনে দিয়ে বেশ কয়েকটি বরফবাহি জেলেদের নৌকা যেতে দেখা যায়। বর্তমান মৌসুমে সরকারীভাবে তিন মাস নিষিদ্ধ থাকলেও সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের কৈখালী স্টেশনের জেলেরা দালালের মাধমে অবৈধ টাকা চুক্তি নিয়ে বনবিভাগের নাকের ডগায় তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় গভীর সুন্দরবনে বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ আহরণ করে আসছে। বনবিভাগের নিয়মিত টহলে তাদের চোখে পড়ে না এধরনের অপরাধ। তারা যেন না জানার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে। ২জন জেলের ১ সপ্তাহের চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা মৌসুমিতে ২৫০০-৩০০০ টাকা আদায় করছে কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা। তবে তারা সরাসরি এ টাকা গ্রহণ করেন না। কৈখালী স্টেশনের মাধ্যমে ডজনখানিক দালাল নিয়োগ দেওয়া আছে। তাদের মাধ্যমে এই টাকা নিয়ে থাকেন। আর ৭দিনের প্রবেশের চুক্তি নিয়ে জেলেদের সুন্দরবনে মাছ ধরতে দিয়ে হাতিয়ে নেই লক্ষ লক্ষ টাকা।
একদিকে জেলেদের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্য করছে, অন্যদিকে সুন্দরবনকে ধ্বংস করছে অসাধু বনকর্মকর্তা। লতাবেঁকী টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের সহযোগিতায় বন্ধ মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ করছে। জেলে প্রতি লতাবেঁকীর বনরক্ষীরা সপ্তাহে ৪ হাজার টাকা করে সেলামী নিচ্ছে। এভাবে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
এদিকে কৈখালী স্টেশনে সুন্দরবন রক্ষায় স্মাট-টিম” সুন্দরবনে থাকলে ও কিন্তু, আজ নিষেধাজ্ঞা ৩ মাস হতে গেলে ও তাদের কোন ধর-পাকড় বা জব্দ করার মত কোন খবর নেই।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এই “স্মাট-টিম” পরিচালনার জন্য কোটির অধিক টাকা বরাদ্ধ দিয়াছে। স্মাট টিম মাঝে মাঝে দুই-একটা ট্রলার, নৌকা ও জাল জব্দ করলেও তা ঘটনা স্থল থেকে উৎকোচ নিয়ে আসামীদের ছেড়ে দিয়েছে। আরাম-আয়েশ আর স্প্রিট-বোটের বরাদ্ধের তেল কিনেই পার হয়ে যাচ্ছে স্মার্ট-টিমের দৈনন্দিন কাজ। তাদের কাজের কোন অগ্রগতি নেই। সূত্রটি আরও জানায়, শুধু বনবিভাগের জনবল দিয়ে স্মার্ট টিম চালালে সরকারের টাকা অপচয় ছাড়া কোন কাজে আসবে না। সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা অনেক জেলেরা বলেছেন,স্মার্ট টিম এবার সাদা মাছ ও কাঁকড়া আহরণকারীদের কাছ থেকে দেখা পেলেই ডিউটি খরচের অজুহাতে ২-৩ হাজার টাকা করে আদায় করছে।
বনবিভাগের এই সমস্ত নানামুখী ঘুষ বাণিজ্য অনিয়ম সেই বৃটিশ আমল থেকে চলে আসছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, সাংবাদিক-এর প্রতিবাদ করলে বনরক্ষীরা নানা অভিযোগ খাঁড়া করে জেলেদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। জেলেরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ কারর জন্য ঘুষ বাণিজ্যসহ সকল অনিয়মের সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করতে বাধ্য হয়। জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক ও স্থানীয় সাংবাদিক যারা ঘুষ বানিজ্যসহ বনরক্ষীদের নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করেন বনবিভাগের অসৎ কর্মকর্তারা উদোর বোঝা বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বন মামলা দেন। এমন মামলায় উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক ও সাংবাদিকরা অনেকই ভুগছে। যা আদালতে শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয় না। অবশেষে বিচারকরা খারিজ করে দেন। এই সমস্ত পাতানো মামলার করণে বনবিভাগের ৯৫% ভাগ মামলার দায় হতে আসামীরা অব্যহতি পাচ্ছে। কারণ, মিথ্যা মামলায় ঝুলিয়ে রাখায় স্বাক্ষীও স্বাক্ষ্য দিতে চায় না। নিজের স্বার্থ হাসিল করতে মিথ্যা মামলা দাখিল করায় বন কর্মকর্তা।
এঅভিযোগ আদালতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বন মামলা পরিচালকের। এভাবে বনবিভাগ সরকারের টাকা অপচয় করছে। এজন্য দরকার দক্ষ বন কর্মকর্তা। যারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেজন্য, নতুন এবং দক্ষ জনবল নিয়োগেরও প্রয়োজন রয়েছে।
বনবিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক পদ থেকে উচ্চ পর্যায়ে আর্মি অফিসার নিয়োগ দিয়ে যদি বনবিভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে বনবিভাগের ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা ঘুষ কেলেঙ্কারীসহ নানাবিধ দূর্নীতি দূর হতে পারে। তাহা না হলে এটা বন্ধ হওয়ার কোন আলোর পথ দেখা যাচ্ছে না।
নিষেধাজ্ঞা মৌসুমে সুন্দরবনে প্রবেশে এধরনের নানা অভিযোগের কারণ জানতে চাইলে কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা জামির হোসেন বলেন, আপনার অভিযোগ সঠিক নয়। যে নৌকাগুলো যেতে দেখেছেন সেগুলো হতে পারে রেনু পোনার নৌকা তবে অনেক নৌকা যায় তবে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না। তবে প্রমাণিত হলে দায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনি প্রমাণ দেন, আমি এখন বাহিরে আছি। আপনি ২৯ তারিখ অফিসে আসবেন কথা হবে বলে তাড়াহুড়ো করে ফোনটা কেটে দেন।#