আলিফ হোসেন,তানোর……………………………………………….
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ীর হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনজন কর্মচারীকে অবৈধ পন্থায় যোগদান করাতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রাণনাশ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে কর্মচারী নিয়োগ ও তাদের অবৈধ পন্থায় যোগদান করাতে প্রধান শিক্ষকের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে ঐ কর্মকর্তা। কিন্ত্ত সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলীসহ অন্য শিক্ষকদের প্রাণনাশ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্কুল শিক্ষকগণ।
এদিকে খবর ছড়িয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ এমপির নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করে এমপির সুনামক্ষুন্ন করছে।
জানা গেছে, গত ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলী লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। এই সময় স্কুলের সকল শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক লিখিত বক্তবে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৩ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদ শূণ্য থাকায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মতিউর রহমান ও সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ যোগসাজসে বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ দানের জন্য তৎপর হয়ে উঠেন। সভাপতি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্তের আহ্বান করেন এতে ৩টি পদে মোট ৪১ জন প্রার্থীর আবেদন বৈধ্য হলে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এরই মাঝে আমরা জানতে পারি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছেন। পরীক্ষা নেওয়ার আগেই তাদের মনোনিত ৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। আমি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে অনৈতিক কর্মকাণ্ড জানার পর পরীক্ষা নিয়ে অনীহা প্রকাশ করি।
কিন্ত্ত পরবর্তীতে সভাপতি ও সহকারী শিক্ষক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা মাধ্যামিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলমকে ম্যানেজ করে আমাকে মোবাইল ফোনে তার অফিসে ডেকে পাঠান। আমিসহ কয়েকজন উপস্থিত হলে সেই অফিসে শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে নিয়োগটি সম্পন্ন করতে চাপ সৃষ্টি করেন। আমি তাতে রাজি না হলে শিক্ষা কর্মকর্তা সকলের সামনে বলে উপরের নির্দেশনায় কাজ করছি সবকিছু সমঝোতা করে প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে নিয়োগটি সম্পন্ন করে ফেলেন। নইলে আপনার চাকরির সমস্যা হবে, উপর মহল যা নির্দেশ দিবে আমি তা করতে বাধ্য হবো তখন আর কিছু করার থাকবে না।
আমি তখন চাপের মধ্যে নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্য রাজি হয়। তবে আমরা জানতে পারি মোঃ আবুল কালাম আজাদ তিন প্রার্থীর নিকট হতে প্রায় ৩৪ লাখ পঞ্চশ হাজার টাকা নিয়েছেন যা এলাকার সর্বসাধারণের মুখে মুখে শোনাযায়। এছাড়াও বিদ্যালয়ে এক সভাশেষে শিক্ষকদের সামনে আবুল কালাম আজাদ নিজে টাকা নেওয়ার কথা বলেন।
গত ২১ জুন স্কুলের মিটিংয়ে স্কুলের উন্নয়ন বাবদ ৪ লাখ টাকা দিবে বলে সভাপতি সম্মতি প্রকাশ করে। গত ২২ জুন নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। নিয়োগ কমিটি “নিরাপত্তা কর্মী” পদে মোঃ জাহিদ আলী, “পরিচ্ছন্নতা কর্মী” মোঃ সেলিম রেজা, “আয়া” পদে শ্রীমতি আন্না মারান্ডীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরই মাঝে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মতিউর রহমান ও সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নিজেই খাতা-কলমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ছাড়াই গত ৩ জুলাই নিয়োগপত্র দিয়ে ৯ জুলাই তারিখে যোগদান দেখিয়ে প্রার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। খাতা-কলমে একটি মিটিং দেখিয়ে নিয়োগ ও যোগদান করার কথা উল্লেখ করে, যাহা নিয়োম বহির্ভূত। এতে আমি অসম্মতি জানালে সভাপতি ও সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ নিয়োগ দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। আমি তাদের অবৈধ কাজে সম্মতি না দেওয়ায় চাকরিচ্যুত ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাদের এইসব কর্মকান্ডের মাঝেই সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ আমাদের বেতন ভাতা বন্ধ রাখার জন্য সভাপতিকে নির্দেশ দেন এবং এক সপ্তাহ আমাদের বেতনভাতা বন্ধ রেখে বলেন, নিয়োগ ও যোগদান সম্পন্ন করিলে সব সমস্যা সমাধান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, শিক্ষক প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। সে নিজেকে এমপির প্রতিনিধির পরিচয়ে এবং এমপির সঙ্গে সু-সম্পর্ক আছে এমন জাহির করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। বিভিন্ন মানুষের কাছে চাকরি দেওয়ার নামকরে টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া এবং বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা থেকে সিসিবিভিও কর্তৃক যে কর্মকর্তা ছিল তারা বিজ্ঞান মেলার খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেন তাহাও তিনি আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের অনেক অর্থ আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে।
এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে সভাপতিকে হাতের মুঠোই নিয়ে নিয়োগ বানিজ্য ও আমাদের হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। গত ১৯ জুলাই বিদ্যালয়ের সভায় সভাপতি ও সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ আবারও অবৈধ পন্থায় নিয়োগ যোগদান করার জন্য প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করে। আমরা শিক্ষকরা রাজি না হলে প্রাণনাশ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে মিটিং থেকে চলে যায় এবং আমাকে চাঁদাবাজির মামলা দিব বলে হুমকি দেয়। এছাড়াও পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে হাত-পা কেটে নিবেন বলেও হুমকি দেয়।
এমতাবস্থায় আমরা ১৪ জন শিক্ষক, কর্মচারী বিদ্যালয়ে যেতে প্রাননাশের আশংকা মনে করছি। যে কোন মুহুর্তে আমাদের উপর হামলা করে প্রাননাশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও সভাপতি বিভিন্ন জনকে দিয়ে মোবাইল ফোনে নিজেদের পরিচয় না দিয়ে নানান ধরণের হুমকি প্রদান করছে। সভাপতি মতিউর রহমান ও সহকারি শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের অবৈধ্য নিয়োগ যোগদান সম্পন্ন করিতে প্রচন্ড চাপে রযেছে। আমরা সকলে এই বিষয়ে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি কোনো শিক্ষককে কোনো কিছুই বলেননি। হুমকি ধামকির বিষয়টি মিথ্যা। যে কেউ কোন অভিযোগ তুলতেই পারেন বলে জানান তিনি। এই বিষয়ে স্কুলের সভাপতি মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বুধবার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভা ছিলো। সেখানে তিনজনকে যোগদান করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়। প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা বলেন, যে ভাবে যোগদান করাতে বলা হয়েছে তা বৈধ না। আমি তাদের যোগদান করাতে অনুরোধ করি মাত্র।#