ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি…
বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে অভাবনীয় ব্যাপারগুলো ঘটেছিল একাত্তরে। সোনালি অর্জন ৯ মাস যুদ্ধে অর্জিত হয়। অধরা স্বপ্নগুলো ধরা দেয় গৌরবময় মাস ডিসেম্বরে। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই মাসে লাখো প্রাণ ও লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল দেশের মুক্তিকামী মানুষ। এই মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় লাল-সবুজের পতাকা। তাই ডিসেম্বর এলেই পথে-প্রান্তরে, হাটে-বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ান ভ্রাম্যমাণ হকাররা। মনের মাঝে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা যেমন তৈরি করছে তেমনি জীবিকাও জোগাচ্ছে এ পতাকা।
ডিসেম্বর মাসকে কেন্দ্র করে কয়েক ফুট লম্বা বাঁশের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বড় থেকে ছোট আকারের লাল-সবুজের পতাকা সাজিয়ে পথে পথে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন একদল মানুষ, যাদের আমরা বলি ‘পতাকার ফেরিওয়ালা’। উত্তরের জেলায় শীতের হিম বাতাসে ফেরিওয়ালাদের হাতে পত পত করে উড়ছিল বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখা পতাকা। শুধু পতাকা নয়, মাথায় ও হাতের জন্য লাল-সবুজের ব্যাজ, বাচ্চাদের জন্য প্লাস্টিকের হাতলসহ পতাকাও বিক্রি করছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার পোস্ট অফিসের সামনে দেখা হয় ১৯ বছর বয়সী মোঃ টুটুল এমনই এক মৌসুমি পতাকা বিক্রেতার। তার সঙ্গে কথা হয়। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলা, ভাঙ্গা উপজেলার ,মহেশ্বরদি রাজন্দা গ্রামে।
তিনি জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখিনি। তবে বাপ-দাদার কাছে অনেক কাহিনি শুনেছি। হৃদয়ে রয়েছে স্বাধীনতার চেতনা । তাই বিজয় ও স্বাধীন দিবসের মাস এলেই ফেরি করে পতাকা বিক্রি করার জন্য নেমে পড়েন তিনি। বিক্রি হয় প্রচুর। তিনি বলেন, এ সময়টাতে পতাকা, মাথায় ও হাতে বাঁধার ব্যাজ হতো। তাতে পতাকা বিক্রি থেকে আয় হয় প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, এই বিজয় নিশান কাঁধে নিয়ে ঘুরে-ঘুরে বিক্রি করতে ভালোই লাগে তার। ৬ ফুটের একটি পতাকা বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা, ৫ ফুট ১০০ টাকা, সাড়ে ৩ ফুট ৮০ টাকা, আড়াই ফুট ৫০ টাকা, দেড় ফুট ৩০ টাকা আর ১ ফুট ২০ টাকা এবং ফিতা আর ব্যান্ড বিক্রি করছেন ১০ টাকা দরে। তার মতো আরও মৌসুমি পতাকা বিক্রেতাদের বাড়তি উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় লাল-সবুজের পতাকা।#