1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Rokon :
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:০১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ:
পলাশবাড়ীতে ইউনিয়ন পরিষদে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধনের অভিযোগ : তদন্তে মিলছে না অস্তিত্ব! রাজশাহীর মোহনপুরে প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থা ভোলাহাটে কৃষি দপ্তরের বিনামূল্যে বিভিন্ন ফলের চারা, রাসায়নিক সার বিতরণের উদ্বোধন ও আলোচনা সভা ধোবাউড়ায় অনলাইন জোয়া ৫০ লাখ টাকা নিয়ে কাড়াকাড়ি আত্রাইয়ে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে আলোচনা সভা বাঘায় অনিসম্পন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র নিষ্পত্তিকরণ বরিশালের সাজাপ্রাপ্ত আসামী পঞ্চগড়ে গ্রেফতার  ভোলাহাটে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজের  নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে স্থানীয় এলাকাবাসীর মানববন্ধন বাগমারায় পথশিশু ধর্ষণ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সনাক্ত হয়নি অপরাধী পঞ্চগড়ে চালু হলো ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র

মব ভায়োলেন্স’ থামবে কবে?

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ৫৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
৥ মোঃ আলফাত হোসেন৥
গত ২৪শের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ-পরবর্তী সহিংসতায় খুলনার কয়রায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজার বাসভবনে ঢুকে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে ওই বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে পুড়ে যায় মৃতদেহটি। রাত পৌনে ৮টার দিকে (বিক্ষুব্ধ জনতা)সাতক্ষীরার আশাশুনি ও সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জন নিহত হয়।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরো ১০-১২ জন প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী নেতা জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকে চেয়ারম্যান (জাকির)সহ তার সঙ্গে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। এ সময় বাড়িতে থাকা জাকিরের স্ত্রী ও মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।রাত নয়টার দিকে মৃগাডাঙ্গা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে মৃগাডাঙ্গা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী তৌহিদ ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী জাহিদ হোসেন (২৮) ও ফারুক হোসেন নিহত হন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় শিবিরের নেতা-কর্মীদের মারধরের জেরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হক (দোলন) ও তাঁর বাবার বাড়িতে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। কয়েকজন নিচতলায় পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলটির কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখান থেকে ২১ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতির সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতকারীরা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গণসংহতি আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা সংগঠক সাংবাদিক আলফাত হোসেনের গ্রামের বাড়িতে হামলা করে এসময় ওই সাংবাদিক কৌশলে আহত অবস্থায় বাড়ি থেকে পালালে, বাড়িতে না পেয়ে বাড়ি ভাংচুর করে জীবননাশের হুমকি প্রদান করে আসে।সাতক্ষীরা সদর ও শ্যামনগর থানা এবং ট্রাফিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কথা জানিয়েছিল পুলিশ।
সাতক্ষীরা শহরে আওয়ামী লীগ নেতা আবু আহমেদ, ফিরোজ কামাল, লায়লা পারভিন, তামিম আহমেদ, সুব্রত ঘোষ, আবদুল মান্নান, তজুলপুরের সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, বৈকারি গ্রামের আলী হোসেন, নূরুল ইসলাম, ইউনুস আলী, আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ঘোষ সনৎ কুমার, প্রণব ঘোষ, বিশ্বজিৎ সাধু, জাকির হোসেন, শেখ নূরুল হক, কলারোয়ার ফিরোজ আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, মজনু চৌধুরী, কাজী শাহাদাত, শ্যামনগরের অসিম কুমার মৃধা, উৎপল মণ্ডল, মলয় মণ্ডল, আবদুল মুজিদ, রবিউল ইসলাম, এজাজ আহমেদ, সেলিনা সাঈদ, সেলিম রেজা, মতিয়ার রহমান, সুফিয়ান সফিকুল ইসলাম, আশাশুনির রাজেশ্বর দাস, পুলিশ কর্মকর্তা হারুন, দেবহাটার নজরুল ইসলামের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছিল। তাঁদের কারও কারও বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১০ মাসে মবের শিকার হয়ে এবং গণপিটুনিতে সারা দেশে ১৭৪ জন মারা গেছেন। পুলিশও রেহায় পাচ্ছে না মব ভায়োলেন্স থেকে। আসামি ছাড়িয়ে নেওয়া এবং বেআইনি দাবিতে থানা ও পুলিশের যানবাহন ঘেরাও করে হামলা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানা যায়, ১০ মাসে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৪৭৭টি মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪১টি, সেপ্টেম্বরে ২৪, অক্টোবরে ৩৪, নভেম্বরে ৪৯, ডিসেম্বরে ৪৪, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭, মার্চে ৯৬, এপ্রিলে ৫২ এবং মে মাসে ৬২টি।
গত কয়েমাস ধরে দেশ খবরের শিরোনামে উঠে আসছে, ‘গণপিটুনি’ বা ‘মব ভায়োলেন্স’। দেশজুড়েই যেন সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে বিষয়টি। আজ রাজশাহী তো কাল ঢাকা,খুলনায়। পরদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে। দেখা যাচ্ছে যেন মহামারীর মতোই গণপিটুনির ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছিলো। আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সব থেকে যেটা আশ্চর্য এবং বেদনাদায়ক বিষয় হলো, এই ধরনের গণপিটুনির ঘটনা ঘটবার সময় যে ডিড় তৈরি হয়, ওই ভিড়ের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ ঘটনাগুলোর ভিডিও করছে এবং সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। এতে করে পুরো সমাজজুড়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। গণপিটুনির ঘটনা শুধু অমানবিকই নয়, একটা অদ্ভুত নারকীয় আনন্দের মধ্যে দিয়ে একটি মানুষকে পিটিয়ে মারা ঘৃণ্য অপরাধ। একজন অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি, সে অপরাধী কি অপরাধী নয়, সেটা আদালত কর্তৃক নির্ধারণ করার আগেই, তাকে নৃশংসভাবে মারধর করা, খুন করা, এই দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করার চেয়ে নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা আর কী হতে পারে?
কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বেআইনি হিংসাত্মক ঘটনাকে বৈধতা দানের প্রথম শর্ত, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের বিপরীতে এক বা একাধিক কাল্পনিক ‘প্রতিপক্ষ’ বা ‘শত্রুপক্ষ’ নির্মাণ, যারা সব দিক থেকেই ‘আমাদের’ তুলনায় খারাপ ও নিকৃষ্ট।
শত্রুপক্ষকে একবার নিকৃষ্ট প্রতিপন্ন করতে পারলে তার প্রতি যে কোনও নিষ্ঠুরতার বৈধতা অর্জন করা অনেক সহজ হয়। তার বিরুদ্ধে যেকোনো হিংস্রতা বা নির্যাতন স্বাভাবিক হয়। হিংস্রতার এই ক্রমাগত স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া ক্ষমতার প্রতি অন্ধ আনুগত্যের বাস্তব পরিস্থিতি তৈরিতে কীভাবে সাহায্য করে, তার বহু উদাহরণ গবেষকরা পেশ করেছেন কার্যত দুনিয়ার সব প্রান্ত থেকেই। বহু লক্ষ মানুষকে হত্যা, কোটি মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নেওয়া, তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা— মানুষের প্রতি মানুষের অকল্পনীয় সব অত্যাচারের সাক্ষী হয়েছে পৃথিবী। ওই অত্যাচার করতে পেরেছে মানুষ, কারণ রাজনীতি আর সমাজ মিলে সেই অভাবনীয় হিংস্রতাকে ‘স্বাভাবিক’ করে তুলেছিল।
আমাদের দেশেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে উপজীব্য করে বিভিন্ন স্থানে মব-ভায়োলেন্সের নামে পিটিয়ে হত্যার যে মব চলছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
মব ভায়োলেন্স সহজ কথায় বলা যায়, কিছু উত্তেজিত মানুষ বা ক্ষুব্ধ জনতা যখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এক বা একাধিক মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করে সমবেতভাবে প্রহার করে তাকেই বলা হয় মব ভায়োলেন্স বা গণপিটুনি। অনেকে এটাকে মব জাস্টিস বলেন। যদিও এর সঙ্গে জাস্টিস-এর কোনো সম্পর্ক নেই। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য মানুষ বা উত্তেজিত মানুষ কখনো বিচার বা রায় প্রদান করতে পারে না। এটা স্পষ্টতই ভায়োলেন্স বা সহিংসতা। সংঘবদ্ধ অপরাধ।
বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া যেকোনো হত্যাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং এসবের দায় সরকারকে নিতে হবে। কিন্তু সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আর সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা তো বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাকে পুরোপুরি অস্বীকারই করেছেন।
এটা স্পষ্ট যে, সরকারের গাফিলতির সুযোগে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ দীঘিনালার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার পর পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর জের ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-অভিবাসী সংঘর্ষে চারজন পাহাড়ি নাগরিক নিহত হন। এদের মধ্যে জুনান চাকমা, ধনঞ্জয় চাকমা ও রুবেল চাকমা গুলিতে নিহত হন। এবং ডিসি অফিসের খুব কাছে একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা ১৭ বছর বয়সী অনিক চাকমাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পাহাড়িদের অনেক ঘরবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় অনেক বাড়ি-ঘর। অথচ মামুন হত্যায় তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার যে মামলাটি করেছেন, সেখানে হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘উপজাতি ও বাঙালি’দের দায়ী করেছেন। তিনি মামলায় যে তিনটি নাম উল্লেখ করেছেন, সেই তিন জনই বাঙালি।
গণপিটুনির বাইরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হেফাজতেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হেফাজতে। এসব মৃত্যু প্রমাণ করে দেশে সুষ্ঠু আইনের শাসন নেই। বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোক আর গণপিটুনিতে হোক— সবই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। মব ভায়োলেন্স নৃশংস ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এর দায় তো সরকারের উপরই বর্তায়। কেননা জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ১০ মাস হয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মব ভায়োলেন্সের ঘটনা বাড়ছেই। রাষ্ট্রের ন্যূনতম যে শৃঙ্খলা, তা এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। স্থিতিশীলতা আসেনি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কঠিনভাবে দক্ষতার সঙ্গে যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তারা সেটা নেননি। সামরিক, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের বিচারিক (ম্যাজিস্ট্রেসি) ক্ষমতা দেওয়ার পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি।
যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মব ভায়োলেন্স বন্ধ হবে না। আগের মতো বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে নতুন নতুন সহিংসতা ঘটতে থাকবে। প্রতিহংসা বা মব ভায়োলেন্স দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এর জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমরা অতীতে দেখেছি, এদেশের মানুষ একদিকে যেমন আত্মসচেতন, সংযমী ও দৃঢ়, পাশাপাশি নারী-পুরুষ-বর্ণ-ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে হৃদয়ে একটি কোমল মানসিকতা লালন করে। সেই কোমল মানসিকতা দিয়ে সে প্রতিবেশীর প্রতি অন্য মানুষের প্রতি একটা সহানুভূতি ও ভালোবাসার হাত চিরদিন বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই হাত কি এখন কোনো কারণে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে?
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনো সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। যাকে ঘিরে অভিযোগ, তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো বিধান নেই। থাকতে পারে না। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। বোঝাতে হবে।
বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, খানিকটা মানসিক অসুস্থ লোকেদের ওপর নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদির অপবাদ এনে, তাদেরকে হেনস্তা করা একটা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে, ব্যক্তিগত শত্রুতার নামে এই ধরনের অভিযোগ তৈরি করে, মানুষের ওপর অত্যাচার মানুষ হিসেবে নিজের আত্মপরিচয়কেই খাটো করে।
একজন মানুষের ওপর দানবীয় অত্যাচারকে আরেকজন মানুষ উপভোগ করছে। এই বিকৃত মানসিকতা আমাদের দেশে যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এটা ভাবলে আঁতকে উঠতে হয়। চোখের সামনে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আর একদল মানুষ সেটা উপভোগই শুধু করছে না, তার ভিডিও করছে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে একটা বিকৃত সমাজ মনস্কতার পরিচয় রাখছে।
এই দেশের মানুষ কি ক্রমেই বিবেকবর্জিত হয়ে যাচ্ছে? একজন মানুষের আরেকজন প্রতি কোনো সহানুভূতি থাকবে না? এতটুকু ভালোবাসা, দায়িত্ব থাকবে না? দায় কি পুরোটাই কেবল প্রশাসনের? দায়িত্ব সবটাই কেবল পুলিশের? নাগরিকের দায় নেই? সাধারণ মানুষের দায় নাই? এই বিষয়গুলো কি আমরা কখনোই ভাবব না? যে অসহায় মানুষগুলোকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, যারা বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের জন্য এতটুকু ভালোবাসা থাকবে না? আমরা কি একটিবারের জন্য প্রতিজ্ঞা করব না যে, আর একজনও মানুষকে, এভাবে আমরা খুন হতে দেব না?
একদল উন্মত্ত মানুষ যেভাবে আইনকে হাতে তুলে নিচ্ছে, নিজেদের ইচ্ছেমতো নানা জায়গায় মব ভায়োলেন্স সৃষ্টি করছে, গোটা ব্যাপারটা যদি এখনই দৃঢ় হাতে মোকাবেলা করতে না পারা যায়, তাহলে আগামী দিনে এটা কেবল রাজনীতিবিদদের জন্য নয়, গোটা সমাজ ব্যবস্থার পক্ষেই একটা বড় রকমের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।#

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট