# মো: নুর কুতুবুল আলম …………..
রাজশাহীর বাগমারায় জালিয়াতির মাধ্যমে ভবানীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসার পুরষ্কার গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সালেহা ইমারত ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০২১ সালের এস.এস.সি সমমান এবং এইচ.এস.সি সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ হাজার ৫ শত ৬৮ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সালেহা ইমারত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ।
প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মহা: জিয়াউল হক, বাগমারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম মাহমুদ হাসান। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালায় ছিলেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল। উক্ত অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক মন্ডলী, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা থেকে প্রত্যেক কৃতি শিক্ষার্থীদের সনদ, শিক্ষা উপকরণ তুলে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য বাগমারা আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মাতা-পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত সালেহা ইমারত ফাউন্ডেশন ২০০৬ সাল থেকে ৫ম শ্রেণি, ৮ম শ্রেণি ও এস.এস.সি সমমান/ এইচ.এস.সি সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়ে আসছে। বাগমারা তথা সমগ্রহ দেশে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণি ভূমিকা রাখছে এই ফাউন্ডেশন।
সংবর্ধনা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মাদ্রাসা পর্যায়ে আলিম পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে ভবানীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাকে। পুরস্কার হিসাবে প্রদান করা হয়েছে ১০ হাজার টাকার প্রাইজমানি, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং বই।
প্রকৃত পক্ষে প্রথম স্থান অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বেলঘরিয়াহাট ফাজিল ডিগ্্ির মাদ্রাসা। বেলঘরিয়াহাট মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় ০২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। অন্য দিকে ২০২১ সালে আলিম পরীক্ষায় ভবানীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে কোন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নেই। ভবানীগঞ্জ মাদ্রাসার আলিমে সর্বোচ্চ জিপিএ ৪.৫০। যাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো ভূয়া। তাহেরপুর ফাজিল মাদ্রসা থেকে ০১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থান তাহেরপুরের।
সূত্র জানায়, বাগমারা উপজেলা থেকে ২০২১ সালে আলিম পরীক্ষায় কোন প্রতিষ্ঠান থেকে একক ভাবে তিনজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি। ভবানীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ০৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
.সংবর্ধনাস্থল ভবানীগঞ্জ নিউ মার্কেট মিলনায়তন থেকে ভবানীগঞ্জ মাদ্রাসার নাম ঘোষণা করায় অনেক অধ্যক্ষ, শিক্ষক,কর্মচারীবৃন্দ অবাক হয়ে যান। ভবানীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান এবং উপাধ্যক্ষ ডক্টর ওয়ারেছ আলী জালিয়াতির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসার সম্মাননা নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, যেখানে সংবর্ধনা পূর্ব অনলাইনে নম্বরপত্র, শিক্ষার্থীর ছবি, পিতা-মাতার নাম পূরণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে অধ্যক্ষ আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান এবং উপাধ্যক্ষ ডক্টর ওয়ারেছ আলী জাল-জুয়াচুরি মাধ্যমে নম্বরপত্র স্ক্যান করে জমা দিয়েছেন। একাধিক অধ্যক্ষের সাথে সরাসরি কথা বল্লেও প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ও ঝামেলার ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এর পূর্বেও জালিয়াতি করে ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, এ ধরনের জালিয়াতি হলে ফাউন্ডেশন তার সক্রিয়তা, নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, ঐতিহ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। সূত্রে জানা গেছে, জীবনের শুরু থেকেই অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান নানা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে দাখিল, আলিম এবং ফাজিল কেন্দ্র হওয়ার কারণে দাপটে থাকেন। তাঁর পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সাথে তিনি বিমাতা সুলভ আচরণ করেন। উপজেলার প্রায় শিক্ষক তাঁর আচরণে মনোঃক্ষুন্ন।
এছাড়াও জিল্লুর রহমান বাগমারা উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক ,কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি। দীর্ঘ দিন তিনি এ পদে বহাল। এই সংগঠনে নেই কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া । এই সংগঠনে পাঁচ লক্ষ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছিল। সেই অনুদানের নেই কোন হদিস। আগামীতে অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান ও উপাধ্যক্ষ ওয়ারেছ আলীর অনিয়ম ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে ভবানীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আলহাজ¦ জিল্লুর রহমানের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম চূড়ান্ত পরীক্ষায় তিন জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাল্টা প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল সিটের ঊদ্ধৃতি দিলে তিনি খানিকটা ঘাবড়ে যান। (প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের কপি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত )। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানন, ওই সংগঠনের এখন আর কার্যকারিতা নেই বলে জানিয়েছেন।
সালেহা ইমারত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এঁর নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোর্ডের রেজাল্ট দেখে তালিকা তৈরী করা হয়,তারপরও বিষয়টি আমি দেখবো, কোন ডকুন্টে থাকলে দিন। #