নিজস্ব প্রতিবেদক…………………………………………
রাজশাহীতে নিলাম হওয়া জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা ও পূর্বের জমির মালিক আনন্দ কুমার সাহার বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) সকালে নগরীর পবাপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। এনিয়ে রাজশাহীর শাহমখদু থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করবেন বলেছেন নিলামী জমি ক্রয়কারী মো. সেলিম রেজা।
বুধবার দুপুরে প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ঈসমাইল হোসেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, সকালে থানা এলাকার পাশে এমন একটি ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার পুলিশ ফোর্স পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পবাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আনন্দ কুমার সাহা ২০১৭ সালে সিটি ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি নিজের নামের তিন স্থানে মোট ০.২১৪৫ একর জমি ব্যাংকে বন্ধক রাখেন। কিন্তু তিনি আর ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। সুদসহ এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আনন্দ কুমার ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর বন্ধকী জমি বিক্রি করতে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর ২২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য নিলামে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জমিগুলো কিনে নেন। নিলামের পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেলিম রেজাকে জমি বুঝিয়ে দেয়।
এদিকে ভুক্তভোগী সেলিম রেজার অভিযোগ, বুধবার সকালে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জনের বাহিনী নিয়ে গিয়ে ওই জমিতে থাকা দুটি স্থানে লাগানো সাইনবোর্ড গুড়িয়ে দেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে শাহমখদুম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরের এই জমি দখল করতে যাওয়ায় পুলিশ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামকে ভর্ৎসনা করেছে।
ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জানান, তিনি জমি কেনার পর নিজের নামে নামজারি করে নেন। খাজনাও পরিশোধ করেন। এরপরে আনন্দ কুমার সাহা হাইকোর্টে গিয়ে একটি রিট করেন যে তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে চান এবং জমি ফেরত চান। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানিতে নিলাম বিজ্ঞপ্তিটির শুনানির ওপরে হাইকোর্ট তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা দেন এবং আনন্দ সাহাকে চলতি বছরের ৩০ মে এর মধ্যে আগের ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং নিলাম পরবর্তী সময়ের সুদসহ সমুদয় পাওনা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট জানিয়ে দেন, আনন্দ সাহা এই সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এই আদেশ খারিজ হবে এবং তাকে ৫ লাখ টাকা হাইকোর্টে জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু এখনও ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে পারেননি আনন্দ সাহা।
সেলিম রেজা আরও জানান, ব্যাংকে টাকা পরিশোধ না করেই কাউন্সিলরকে নিয়ে জমি দখলে নেমেছেন আনন্দ কুমার সাহা। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকেন বলে সব সময় জমিতে এসে বসেও থাকতে পারছেন না। এ সুযোগে বুধবার তার নিলাম নেওয়া দুটি জমির সাইনবোর্ড গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আমার জমিটি দেখাভালের জন্য কয়েকজন প্রতিনিধিকেও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। জমিতে গেলেই হাত-পা ভেঙ্গে ফেলার বারংবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি।
জমিতে লোকজন নিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বীকারও করেছেন রাসিক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা। তবে জমির দখলে যাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় জমিটা নিয়ে গণ্ডগোল আছে, তাই গিয়েছিলাম।’ তাঁর দাবি, যৌক্তিক কারণ আছে বলেই তিনি আনন্দ কুমার সাহার পক্ষে গিয়েছিলাম। ব্যাংকের নিলাম ও হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জানামতে জমির মালিক আনন্দ কুমার সাহা। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য যাওয়া। তবে আমার দখলে যাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
যোগাযোগ করা হলে আনন্দ কুমার সাহা বলেন, তিনি ব্যাংকে ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। সুদের টাকা এখনও বাকি আছে। ঋণের টাকা দিয়েছেন বলেই জমি উদ্ধার’ করতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমার জমি আমি দখলে নেব না তো কে নেবে?
শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, আনন্দ কুমার সাহা ঋণ পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংক তার বন্ধকী জমি নিলাম করে দিয়েছে। আবার আনন্দ হাইকোর্টে গিয়ে ঋণ পরিশোধ করার একটা সুযোগ এনেছেন। তিনি ঋণ পরিশোধ করলে বা না করলে হাইকোর্ট আবার একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। সেই পর্যন্ত দুইপক্ষকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো থানায় এই ঘটনায় জমির আরেক দাবিদার সেলিম রেজা কোন অভিযোগ করেননি। তবে তিনি অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।#