1. admin@sobujnagar.com : admin :
  2. sobujnoger@gmail.com : Rokon :
শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ:
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনী প্রধান পঞ্চগড়ে বর্তমান কদর বেড়েছে মসলা দ্রব্য তেজপাতার তানোরে ব্যারিস্টার আমিনুল হক স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন  আমরা অপকর্ম করার জন্য রাজনীতি করি না : ভোলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের ঘটনা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল : মামুনুল হক ভোলাহাটে ক্যারেলা সিমগাছ  কর্তন, ৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি,  থানায় অভিযোগ রাজশাহীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে রান ফর রিজিল্যান্স অনুষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৭১.৮১ শতাংশ পরীক্ষার্থীর অংশ গ্রহণ রূপসায় জামায়াতে ইসলামীর যুববিভাগের শিক্ষা বৈঠক অনুষ্ঠিত  যুবদল কালপুর ১ ন! ওয়ার্ড শাখার আয়োজনে মত বিনিময় সভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটিস্টিক শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় এঞ্জেলস গার্ডেন

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
  • ৯৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

# চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি………………………………………..

বছর ছয়েক আগের কথা। ট্রেনে করে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসছিলেন আমিনুল ইসলাম। বগির এক কোনায় বসে কাঁদছিল এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী। তাকে দেখে নিজের ছেলের মুখ ভেসে উঠল আমিনুলের সামনে। তাঁর ২২ বছরের ছেলেটাও অটিজমে ভুগছেন। কাছে গিয়ে জানতে পারলেন, মেয়েটির মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে। বাবা বিয়ে করেছেন আগেই। মা সম্প্রতি অন্যত্র বিয়ে করে তাকে ট্রেনে ফেলে চলে গেছেন।কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে নামেন আমিনুল। এরপর যান সমাজসেবা অধিদপ্তরে। স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা আমিনুলকেই বললেন শিশুটির অভিভাবকদের খুঁজে বের করতে। পুলিশের সহায়তায় সেই কিশোরীকে তাঁর নানির কাছে পৌঁছে দেন আমিনুল। কিন্তু নানি প্রথমে তাকে গ্রহণ করতে চাননি। অনেক বোঝানোর পর গ্রহণ করলেও অখুশি ছিলেন। ওই ঘটনার পরই প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা পেয়ে বসে আমিনুলকে। আরও কয়েকজন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বছর দুয়েক আগে অবশেষে আশ্রয়কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাট এলাকার আমিনুল ইসলাম।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সার্কিট হাউস মোড়ে ‘এঞ্জেলস গার্ডেন’ নামের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এখন বসবাস করছে ১০ অটিস্টিক শিশু-কিশোর। নিরাপদ আশ্রয়ে সেখানে হেসেখেলে দিন কাটছে তাদের। আশ্রয়কেন্দ্রটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদ বললেন, এখানে থাকা শিশুরা আগে ঘরের কোণে একা একা নিরানন্দে সময় পার করত। এখানে সবাই একসঙ্গে থেকে হইহুল্লোড় করে। নাচ-গান করে। ছবি আঁকে। দল বেঁধে বাইরে বেড়ানোর সুযোগ পায়। আনোয়ার জাহিদ বলেন, পরিবারে যাদের আশ্রয়ের সমস্যা রয়েছে এবং খাওয়াদাওয়া ও চিকিৎসার সমস্যা আছে, মূলত তাদের জন্যই গড়ে তোলা হয়েছে এঞ্জেলস গার্ডেন। পরিবারে আশ্রয় আছে, সামর্থ্যও আছে, কিন্তু দেখাশেনার লোক নেই—এমন শিশু-কিশোরদেরও আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এখানে।

 

এঞ্জেলস গার্ডেনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটিস্টিক শিশুদের আশ্রয় দিয়ে কাজ করা একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এঞ্জেলস গার্ডেন। এর প্রতিষ্ঠাতাদের চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদ ও অন্যরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সঙ্গে জড়িত বলে জানেন। প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে। শিগগিরই পেয়ে যাবে। ১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, নয়জন বিভিন্ন বয়সী অটিস্টিক শিশু-কিশোর বসে আছে। হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের (ডাইনিং রুম) মেঝেময় ঘুরে বেড়াচ্ছে পাঁচ বছরের টুকটুকি। দুর্বোধ্য শব্দ করে হাসিমুখে আনন্দউচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। সে দাঁড়াতে পারে না। মা শ্যামলী এসে তাকে ধরে সামলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে কিছুতেই থেমে থাকতে চায় না। অবশেষে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন মা।

 

এখানকার তত্ত¡াবধায়ক ফাতেমা বেগম (৬৫) বলেন, ‘এই টুকটুকি বাড়িময় এভাবেই ঘুরে বেরিয়ে বাড়িটাকে মাথায় তুলে রাখে। স্পষ্টই বোঝা যায় তার উল্লাস।’এরপর সাউন্ড বক্সে গান ছাড়লেন ফাতেমা বেগম। সঙ্গে সঙ্গে কিশোর রিফাত, সবুজ ও ইমন তালে তালে নাচা শুরু করে। থামতেই চায় না। অন্যদিকে বৃত্ত, রাফিয়া ও খাদিজা বায়না ধরেছে, তারা গান গেয়ে শোনাবে। ফাতেমা বলেন, ‘সাউন্ড বক্সে সারা দিন গান বাজিয়ে নাচতেই যেন কয়েকজন শিশুর যত আনন্দ। আমরাও চেষ্টা করি তাদের আনন্দে রাখার।’ টুকটুকির মা শ্যামলী বলেন, টুকটুকির প্রতি অবহেলা সহ্য করতে না পেরে এখানে এসে তিন মাস আগে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি না হলেও স্বামী আর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেন না। ১০-১২ বছরের আরও একটি ছেলে আছে। তাকে মায়ের কাছে রেখে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মা-মেয়ের ভরণপোষণ হচ্ছে। অন্য শিশুদেরও দেখাশোনা করেন। এ জন্য তাকে বেতন দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

 

বাড়িতে আশ্রয় আছে কিন্তু দেখাশোনার কেউ নেই, এঞ্জেলস গার্ডেনে আশ্রয় নেওয়া এমন দুজন শিশুও আছে। তাদের একজন নিশা। প্রায় ১৫ বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নেন তাকে। কিছুদিন পর জানতে পারেন মেয়েটি বিশেষ চাহিদার। তবু মায়ায় জড়িয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। মেয়েটি কথা বলতে পারে না। নিজের সব কাজে দরকার হয় মায়ের সহায়তার।সম্প্রতি সেই মা মারা গেলে মেয়েকে নিয়ে অকূলপাথারে পড়েন বাবা অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক নাইমুল হক। এঞ্জেলস গার্ডেনের কথা শুনে নিয়ে আসেন সেখানে। নাইমুল হকের ভাষায়, যে মেয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে চাইত না, সে এখন গার্ডেনের সবার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই বেড়াতে যায়। হাসিখুশি দেখা যায় তাকে। তিনি বলেন, ‘আমার এই মেয়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে এঞ্জেলস গার্ডেন। আর আমার কী যে উপকার হয়েছে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এর উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। আমিও তাঁদের পাশে থাকতে চাই।

 

যেভাবে গড়ে উঠল এঞ্জেলস গার্ডেন ট্রেনের সেই প্রতিবন্ধী কিশোরীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমিনুল ইসলাম। প্রস্তাব শুনে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় থাকা একখন্ড জমি দিতে রাজি হন চেয়ারম্যান। পরে অজ্ঞাত কারণে তা দেওয়া হয়নি।এরপর তিনি যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদের কাছে। তাঁরও একটি অটিস্টিক মেয়ে আছে। তিনিও চান এসব অসহায় ও নিরাশ্রয় শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে। এ দু’জনের সঙ্গে যোগ দেন জহিরুল ইসলাম। আরও কিছু শুভানুধ্যায়ীর সহায়তায় আনোয়ার জাহিদের নিজস্ব ভবনের চার কক্ষবিশিষ্ট নিচতলায় এই তিনজন মিলে গড়ে তোলেন এঞ্জেলস গার্ডেন।

 

আমিনুলের ট্রেনে দেখা সেই কিশোরীকে খুঁজে বের করে তাকে আশ্রয় দিয়ে শুরু হয় এঞ্জেলস গার্ডেনের যাত্রা। বর্তমানে এখানে থাকা ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। আনোয়ার জাহিদ বলেন, নিজস্ব প্রশস্ত জমির ওপর নির্মাণ করা ভবনে একদিন এঞ্জেলস গার্ডেনের স্থায়ী ঠিকানা হবে, এমন লক্ষ্য নিয়েই তাঁরা কাজ করছেন। জমির ব্যবস্থা করার সামর্থ্য থাকলেও ভবন নির্মাণে হৃদয়বান বিত্তশালী মানুষের সহযোগিতা দরকার বলে জানান তিনি।

 

আমিনুল ইসলাম সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগারিক। বহু বছর থেকে গরিব বয়স্ক লোকদের চোখের ছানি অস্ত্রোপচারে সহায়তা ছাড়াও প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোতে ‘পরোপকারী পরমবন্ধু’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আনোয়ার জাহিদ শহরের সেবা ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত। মহানন্দা প্রবীণ নিবাস নামে একটি বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, অন্ধ হাফেজদের আবাসস্থল প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও সম্পৃক্ত তিনি। তাঁদের সঙ্গে গোড়া থেকেই আছেন জহিরুল ইসলাম। তিনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। তিনি বৃদ্ধাশ্রম, সদর হাসপাতালে গরিব রোগীদের সঙ্গে থাকাসহ নানা মানবিক কাজে জড়িত। ১১ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি থাকলেও এ তিনজনই হচ্ছেন এঞ্জেলস গার্ডেনের মূল চালিকা শক্তি।

 

কমিটির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম।আনোয়ার জাহিদ জানান, শিশুদের দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছে তিনজনকে। খাওয়া খরচসহ পরিচালনা ব্যয় হয় মাসে ৫০ হাজার টাকা। তাঁদের এবং বন্ধু-স্বজনদের আর্থিক সহায়তায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।এঞ্জেলস গার্ডেনের সাফল্য কামনা করে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, বিশেষ চাহিদার এমন শিশুদের নিয়ে সমাজে কাজ করার লোকের অভাব। কাজটাও খুব কঠিন। আনোয়ার জাহিদ ও তাঁর সঙ্গীরা কঠিন কাজটিই বেছে নিয়েছেন।#

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট