বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহী বাঘার পদ্মার চরের চকরাজাপুর ইউনিয়নের পানিবন্দী ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি-সেরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও দুঃসময়ে পাশে দাড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভ’গিরা। এদিকে অব্যাহত বৃষ্টি ও বণ্যার জমে থাকা পানি নামতে শুরু করলেও পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারি লোকজন।
জানা যায়, গত বুধবার(২অক্টোম্বর) মালোশিয়া প্রাবাসী আরিফুল ইসলামের পক্ষে তার পিতা নবীর উদ্দীনসহ আত্মীয় স্বজন দিয়াড়কাদিরপুর, কালিদাশখালী এলাকায় পানিবন্দী ও ভাঙনে বসতভিটা হারানো ২০০ শত পরিবারকে চাউল ১ কেজি, ডাল,তেল,আলু, পিঁয়াজ,রসুন,লবন,খাবার সেলাইন বিতরণ করেছেন। মালোশিয়া প্রাবাসী আরিফুল ইসলাম উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের নবীর উদ্দীনের ছেলে। এর আগে রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা পানিবন্দী ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ১০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন। উপজেলার আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়।
ভ’ক্তভ’গিদের ভাষ্য,যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চৌমাদিয়া গ্রামের সোলেমান হোসেন জানান, অব্যাহত বৃষ্টি ও বণ্যার জমে থাকা পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু চৌমাদিয়া,আতারপাড়া এলাকায় নদী ভাঙনের রেশ কাটতে না কাটতেই নদীর পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্কে রয়েছেন।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার জানান, তার ইউনিয়নটি যোগাযোগ বিছিন্ন চরাঞ্চলে অবস্থিত। অব্যাহত বৃষ্টি ও বণ্যার কারণে কালিদাশখালি,মানিকের চর,পলাশিফতেপুর, নীচ পলাশি, উদপুর,লক্ষীনগর, দিয়াড়কাদিরপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া গ্রামসহ ১০টি গ্রামের সাড়ে ৩হাজার পরিবারের মধ্যে অন্তত ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তার দাবি,অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। বণ্যায় তলিয়ে গেছে আগাম চাষ করা সবজি ক্ষেত। চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজার সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের চারিদিকে পানি জমেছে। পদ্মার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নিম্ঞ্চল। এতে ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। চূলা জ্বালাতে না পেরে অনেককেই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে রান্না করা খাবার নিয়ে খাচ্ছেন।
আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙনের কবলে পড়া আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ মসজিদের অস্থাবর জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন আতারপাড়ার হাবু মোল্লা,মসলেম খা,বাবলু হালদার,চৌমাদিয়ার আনজিরা বেওয়া,কাদির গাজি,ফারুক ব্যাপারিসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। সপ্তাহের ব্যবধানে পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাদের বসত ভিটা।
দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের সাবিরুল ইসলাম জানান, বাড়ি ঘরে পানি ঢুকায়, ছাগল ও গরু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এলাকায় কোন কাজ নেই। সংসার চালাচ্ছেন মাছ ধরে মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে। চৌমাদিয়ায় ওয়ার্ডের মেম্বর আবদুর রহমান দর্জি বলেন, সরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে।
ইউপি সদস্য,কালিদাশখালি গ্রামের বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম জানান, পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। ভ’ক্তভ’গিসহ জনপ্রতিনিধিরা জানান, দুঃসময়ে যারা পাশে দাড়িয়েছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনে ও পানিবন্দী লোকজনের তালিকা করে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, উপজেলায় সবজি চাষ হয়েছে ৪৮৫ হেক্টর। চরে চাষ হয়েছে ৪৫ হেক্টর।আকষ্মিক বণ্যা আর নি¤œচাপের কারণে নীচু এলাকায় আগাম চাষ করা সবজি ক্ষেত ও গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ ক্ষেত, পেঁপে বাগান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। #