সিটি প্রতিবেদক………………………..
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিনটি বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। সেখানে অন্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ জার্মান প্রবাসী লেখক সরাফ উদ্দিন আহমদের ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাÐ: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ জীবন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। এছাড়া উপাচার্য প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট উপহার দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বিশেষ অতিথি মেয়র ক্যাম্পাসে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং শহীদ মিনার ও শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আলোচনা সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন। তিনি হচ্ছেন দেশের তথ্যের আকর। তাঁর জ্ঞান ও আকাক্ষা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। তাই শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ সমার্থক। তাঁর লক্ষ্য সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের লক্ষে এগিয়ে চলা। তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার রাষ্ট্রনায়ক। তিনি সংকট সামাল দেন দৃঢ়তার সাথে, হতাশাকে ঢেকে দেন আশার আলোয়। দেশের মঙ্গল ভাবনা তাঁর মানসে প্রোথিত। দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তাঁকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, রোল মডেল খুঁজতে আমাদের বিশ্বের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকান। সময়ানুবর্তিতার উদাহরণ হিসেবে আমরা বিভিন্ন দেশকে দেখি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময়ানুবর্তিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা আমাদের নবীন প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়। একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যতগুণ থাকা দরকার প্রায় সবগুণই তাঁর আছে। কেননা তিনি মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করেন। কোনো প্রকল্প অনুমোদন হতে গেলে সেটা জনগণের স্বার্থে হচ্ছে নাকি কোনো ব্যবসায়ী-আমলাজর উপকারে হচ্ছে সেটা আগে যাচাই করেন তিনি। যার জন্য দেশে আজ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রাজশাহীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকার রাজশাহীসহ দেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। ইতোমধ্যে রাজশাহীর উন্নয়নে পাঠানো প্রস্তাবগুলি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অক্ষুণ্ন থাকবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রস্তাব বিবেচনার সময় সম্পদের সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ব্যবহারে সরকার বদ্ধপরিকর।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গে বলেন, তিনি তৃণমূল মানুষের নেত্রী। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সফরকালে কখনো বিলাসবহুল হোটেলে রাত্রীযাপন করেননি। বরং সরকারি জায়গায় থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের সমস্যার কথাগুলো জেনে সেই অনুযায়ী কাজ করে আজকের বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে এনেছেন। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদর্শী নেতৃত্বে পাহাড়ে অরাজকতা বন্ধ হয়েছে। পাহাড়িরা আজ দেশের অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে আজ বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজ হচ্ছে যা জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে তারাও স্বাবলম্বী হচ্ছে। এছাড়াও তাঁর সমুদ্রনীতি ভারতের সাথে নদী চুক্তিসহ বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরেন। মেয়র প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সফলতা কামনা করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, দেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আজ বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, স্বল্পমূল্যে চালসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। দেশে কেউ আর না খেয়ে থাকে না। অথচ একটা মহল আজ এ উন্নয়ন সহ্য করতে না পেরে ষড়যন্ত্রে নেমেছে, লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা নিয়ে মারপিটে মেতেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নিকট অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু প্রশিক্ষণ জমা দেইনি।
সভায় দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নমূলক কর্মকাÐের চিত্র তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলেন, দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বৃহৎ সড়ক ব্যবস্থা, ওভারব্রিজ, জ্বালানি তেল ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন এনে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। করোনার ক্রান্তিলগ্নে বিশ্ব যখন দিশেহারা, তখন শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ সেই ক্রান্তির ছাপ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ আজ মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নত বিশ্বের দোরগোড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে দেশ আরো এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা করেন উপ-উপাচার্য।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফলে দেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নসহ দেশ আজ বিশ্বে এক মর্যাদার অবস্থান নিশ্চিত করেছে। তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে সমৃদ্ধির নতুন সারণিতে নিয়ে গেছেন।
উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রেনেসাঁর অগ্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা তাঁর তাত ধরেই দেশ আজ উন্নয়নের দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। কেননা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেমন জমজ শব্দ, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনা দুটি যমজ শব্দ।
উপাচার্য আরো বলে, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ভারত থেকে পুনরায় যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন এবং আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন, তখনই জাতির উন্নয়নের একটি বীজ বপন হয়েছিল। যার জলন্ত উদাহরণ আজকের এই বাংলাদেশ। মহান এই নেত্রীর জন্মদিনে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেন উপাচার্য।
উপাচার্য আরো বলেন, ১৯৮১ সালের মে মাসে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে যে প্রক্রিয়ার সূচনা করেন, প্রকৃতপক্ষে তা এক রেনেসাঁর সূচনা। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের পর দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসন জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু এসময়টা তিনি বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশের উন্নয়নের চিন্তা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা অনেকটাই পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন বুঝতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা। তাই আজ আমরা শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত কল্যাণকামী রাষ্ট্রের দর্শন দেখতে পাই। শেখ হাসিনার আদর্শ, তাঁর মহত্ম ও জাতির প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা স্বল্পপরিসরে বর্ণনা সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপাচার্য আরো বলেন, “যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ”।#