লিয়াকত হোসেন :
রাজশাহী পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে আশ্রয় কেন্দ্রে। আশ্রয় কেন্দ্রটি ১৫-১৬ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন। ২০০০ সালে দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠাতা করেন জামাত নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক মাজিদুর রহমান। মাদ্রাসাটিতে কাগজে কলমে ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হলেও সকল শ্রেণী মিলে ছাত্র-ছাত্রী আছেন ৮১ জন। অপরদিকে কাগজে কলমে ১৪ জন শিক্ষক শিক্ষিকা দেখানো হলেও মাদ্রাসায় আছেন সুপারসহ ৮ জন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ শ্যামপুর দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার শফিকুল, ভারপ্রাপ্ত সুপার মিলন ও বিগত দিনের সভাপতিগনের স্বেচ্ছাচারিতায় গত ২১ বছরেও মাদ্রাসা আলোর মুখ দেখেনি নির্মাণ হয়নি কোন স্থায়ী ভবন।
সরজমিনে মাদ্রাসাটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিজস্ব ভবনটি অর্ধ নির্মিত হয়ে পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে মাদ্রাসা চত্তরে স্থাপিত বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্রস্থলে। কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠাতা সুপার শফিকুল ইসলাম দাবী করলেও ভারপ্রাপ্ত সুপারসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন মো মিলন নামে একজন শিক্ষক। মাদ্রাসা সুপার আব্দুল হাই কে সভাপতি দাবি করলেও কাগজে কলমে কোন প্রমাণ নেই বলেন ভারপ্রাপ্ত সুপার মিলন।
বর্তমানে মাদ্রাসাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ। মাদ্রাসা সুপার শফিকুলের দাবি ২০০৩ সালে ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন মোঃ আব্দুল হাই। এখনো এই টাকার পাওনাদার তিনি। আব্দুল হাই ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কাটাখালী পৌরসভা সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র নান্নু। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট পর্যন্ত মাদ্রাসাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তাদীর।
বিগত ২১ বছরে মাদ্রাসাটির উন্নয়ন ও দৃশ্যমান কোন কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্যামপুর এলাকার স্থায়ী বাসীন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদ্রাসাটিতে বিগত দিনে যারাই মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্বে এসেছেন তারাই কোন না কোন ভাবে স্বেচ্ছাচারিতায় বিভিন্ন ভাবে দাঁয় এড়িয়ে গেছেন। মাদ্রাসার অনুদানের টাকা ও ইসলামী জলসার নামে টাকা তুলে হরিলুট করেছেন। এবারও প্রতিবছরের ন্যায় আগামী ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ১৮ তম বার্ষিক ইসলামী জালসার পোস্টারে আব্দুল হাইকে শ্যামপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি করে পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা করাই এলাকাবাসীর পক্ষ বাধে বিপত্তি।
এলাকাবাসী আরও অভিযোগ প্রতিষ্ঠাতা সুপার দাবি করা শফিকুল বছরে একদিনও মাদ্রাসায় আসে কিনা সন্দেহ। তারই ছত্রছায়ায় ভারপ্রাপ্ত সুপার মিলন মাদ্রাসার ছাদেও রান্নার স্থানে নিজের মুরগী ও ছাগল পালন করেন। ৫ ই আগস্টের পরেও মাদ্রাসাটিতে আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে নাইম ও তাসনিম নামে দুজনকে মাদ্রাসায় চাকুরী দিয়েছেন। তিনি নিজেও একসময় আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। প্রতিবছর মাদ্রাসা ও মাহফিলের নামে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান নিলেও মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে কোন অর্থ খরচের দৃশ্যমান কাজ দেখাতে পারেননি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
মাদ্রাসা সুপার সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার আমিই এই মাদ্রাসার প্রধান আমি কিভাবে মাদ্রাসা চালায় এলাকাবাসীর কাছে জানেন। কোন অনুদান নাই এমপিও নাই বেতন নাই কোন মতে মানুষের দানের টাকায় বিভিন্ন প্রতিকুলার মধ্যে মাদ্রাসা চালায়। যারা মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে তারা কি বিগত দিনে মাদ্রাসার খোঁজ-খবর নিয়েছে মাদ্রাসায় কোন অনুদান দিয়েছে।
মাদ্রাসার নির্মাণাধীন বিল্ডিং ২০০৯ সাল থেকে পড়ে আছে, রড ক্ষয় হয়ে গেছে কেউ কোনদিন মাদ্রাসা নির্মাণের উদ্বেগ নিয়েছে। সিঁড়ি ঘর আমি করেছি, মাদ্রাসায় যাবেন সুপারের অনুমতি নিয়েছেন শিক্ষকদের বেতন কিভাবে চলে খোঁজ নিয়েছেন এর আগে তো মেয়র আব্বাস মাদ্রাসার ছাদ করে দিতে চেয়েছিল দেইনি। নান্নু ও মুক্তাদির সভাপতি থাকা অবস্থায় তো চেটেপুটে খেয়েছে। ইসলামী জালসায় আব্দুল হাইকে সভাপতি করে পোস্টার করার বিষয়ে বলেন, আব্দুল হাই অফিসিয়াল হিসেবে সভাপতি তিনি বিগত দিনে মাদ্রাসাকে ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছেন।
ইসলামী জালসার প্রচারণায় সভাপতি নামের বিষয়ে আব্দুল হাই বলেন, জালসা তো বাতিল হয়ে গেছে, আমি ২০০৩ সাল থেকে ১০ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলাম আমার পূর্বে ছিল প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক মেয়র অধ্যাপক মাজিদুর রহমান। পোস্টারে শিক্ষক মিলন ভুল করেছে আমি সাবেক সভাপতি বর্তমান সভাপতি তো ইউএনও মহোদয়।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মিলন বলেন, আমি বিগত দিন থেকে মাদ্রাসার পিছনে শ্রম দিয়ে আসছি। মাদ্রাসার সুপার তো অন্য এক জায়গায় চাকরি করছেন বেতন নাই কি করবেন। কোনরকম আমার স্ত্রী ও আশেপাশের কয়েকজনকে নিয়ে মাদ্রাসাটি দানের টাকায় পরিচালনা করছি আসছি খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের। মাদ্রাসার নিজস্ব ভবন না থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রকে আমরা মাদ্রাসা হিসেবে অস্থায়ী ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করে আসছি।
মাদ্রাসায় ছাগল পালনের বিষয়ে বলেন মাদ্রাসাতে কেউ ছাগল মুরগী দান করলে আমরা সেটা মাদ্রাসা তে রেখে দেই। এগুলো আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে খাওয়ানোর জন্য। মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মুক্তাদীরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।#