# মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি………………………………….
তীব্র তাপদাহ থেকে বৃষ্টির আশায় রং মেখে, ঢাক-ঢোল বাঁজিয়ে গান গেয়ে রাজশাহীতে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ছিল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও। মূলত তীব্র তাপদাহে থেকে মুক্তির আশায় ব্যাঙের এ বিয়ের আয়োজন করা হয় পবা উপজেলার ভুগরোইল খ্রিস্টানপাড়ায়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শত শত আদিবাসীরা এই বিয়েতে অংশ নেয়।
রাজশাহীর পবা উপজেলার ভুগরোইল খ্রিস্টান পল্লীর মানুষজন প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টির আশায় নানা গান ও গিতের তালে তালে নেচে গেয়ে এই ব্যাঙের প্রতীকী বিয়ে দিয়েছেন। এ গ্রামের বাসিন্দারা পাহাড়িয়া সম্প্রদায়। তাঁরা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। পাহাড়িয়া রীতিনীতি অনুযায়ী এই ব্যাঙের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তারা। গ্রামের একমাত্র চার্চের শিক্ষক আঞ্জলী বিশ্বাসসহ কয়েকজন মিলে এ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেন। এ জন্য গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁরা গ্রামের এক শুকনো পুকুরপাড় থেকে একটি ছেলে ব্যাঙ ও একটি মেয়ে ব্যাঙ ধরে আনেন। তারপর সন্ধ্যায় চার্চে সাজানো ছাদনাতলায় বর ও কনের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিয়েতে বরের নাম রাখা হয় শিমুল। আর কনের নাম মেঘলা বিশ্বাস। গায়ে হলুদের পর কনেকে রাখা হয়েছিল গ্রামের আলফন্স বিশ্বাসের বাড়িতে।
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ব্যাঙের বিয়েতে গ্রামের নারী ও শিশু-কিশোরীরা নেচে-গেয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। এরপর সবাই লাইন ধরে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের আশীর্বাদ নিয়ে বরযাত্রী হিসেবে বর নিয়ে রওনা দেয়। সঙ্গে যান বরের প্রতীকী বাবা সৈকত বিশ্বাস আর প্রতীকী মা ভাবনা বিশ্বাস নামের দুই শিশু। আলফন্স বিশ্বাসের বাড়ি গেলে বরের বাবা-মায়ের পা ধুইয়ে দেওয়া হয় পানি দিয়ে। তারপর সবাই বাড়িতে কনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কনে সাজানো শেষ হলে আঞ্জলী বিশ্বাস পুরোহিত সেজে বর-কনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এরপর বর শিমুলের হাত দিয়ে কনে মেঘলার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। খাওয়া-দাওয়ার পর শেষ হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। পরে বর-কনেকে একটি পুকুরের ভেতর ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিয়ের আয়োজক ও চার্চের শিক্ষক অঞ্জলী বিশ্বাস বলেন, টানা খরায় পথঘাট পুড়ে যাচ্ছে। সব ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পশুপাখি ও অন্যান্য প্রাণী কষ্ট পাচ্ছে পানির অভাবে। আমরা বিশ্বাস করি ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে। তাই আমাদের সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী দুই কোলা ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হলো।’ নিজেরাই আদিবাসী পল্লীর মানুষজনের কাছ থেকে চাল, ডাল, মুরগি ও মসলা সংগ্রহ করে দুপুরে রান্না করে খাবার খান পুরো গ্রামবাসী।#