বাড়ির গেটে প্রবেশ করতেই যে কেউ বুঝতে পারে না এটা কি আসলেই একটি বাড়ির উঠান নাকি একখন্ড শাক, সবজি ফসলের ক্ষেত।
রাজিয়া সুলতানা, একজন গৃহিনী,স্বামী,ছেলে-মেয়ে,শশুর শাশুড়ী নিয়ে ছোট একটি সোনার সংসার। অনেক কস্ট করে একটি পাকা দালান গড়ে তুলেছে।খুব সুন্দর করে রং ও করা হয়েছে। বাড়ির সামনের দিক টুকু তে মোটামুটি একটু জায়গা পড়ে আছে,যেখানে কিছুই করা হয় না তেমন খড় শুকানো ছাড়া।
এর মাঝেই একদিন বাড়িতে উপস্থিত হন নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মেহেদী ইমাম ভাই। ভাই বাড়ির সামনে খালি জায়গা পড়ে থাকতে দেখে বলেন,ভাবি আপনার বাড়িটি সুন্দর, জায়গাও সুন্দর, এই সুন্দর জায়গায় যদি বেড করে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষাবাদ করেন তাহলে আপনার তো আর সব্জি কিনে খেতে হবে না। সেই থেকে শুরু আমার বাড়ির উঠানে শাকসব্জি ফুল,ফল চাষাবাদ।আজ আমি নিরাপদ উপায়ে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাষাবাদ করে নিজে খায়,পাড়া প্রতিবেশীকে দেই এবং বাজারে বাকি টুকু বিক্রি ও করি। আমার দেখাদেখি গ্রামের অনেক বাড়িতেই আজ পারিবারিক পুস্টি বাগান গড়ে উঠেছে।
সাক্ষাতকারে কথা গুলো বলছিলেন বাঁশ বাড়িয়া গ্রামের গৃহিণী রাজিয়া খাতুন,যে কিনা আজ গ্রামে বাড়ির উঠানে সবজি চাষের মডেল হয়ে দাড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির উঠানের চারিদিকে বাঁশের বেড়া দেয়া।উঠানের দুই দিকেই বেড করে বিভিন্ন শাকসবজি লাগানো,একটি বেডে কলমি শাক,একটি তে পুঁই শাক,কাটুয়া ডাটা গুলো এক মানুষ ছাড়িয়ে গেছে,কিছু দিন পরেই কাটবে সেগুলো। গাছে গাছে বেগুনি কালারের বেগুন ঝুলছে,মরিচ গাছ ফল দেবার জন্য বড় হচ্ছে,চিচিংগা,চালকুমড়া গাছে কুমড়া ঝুলে আছে,বেড়ার ধার দিয়ে আবার পাট শাক ও আছে। বেড়া গুলোও বাদ নাই বরবটি এবং ধুন্দল গাছে ছেয়ে গেছে।
বাড়ির দক্ষিন সাইডে একটি আম গাছ আছে, তার নিচ টুকুও তিনি ফাকা রাখেন নি,ছায়া যুক্ত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ ও করেছেন। কৃষি অফিস থেকে পাওয়া হাইব্রিড আমড়া,মাল্টা,আম, লেবু চারা গুলো ও বড় হচ্ছে। এর পাশাপাশি কৃষি অফিসের প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় ছাগল পালন ও শুরু করেছে। এ যেন একটা সমন্বিত পারিবারিক পুস্টি খামার।
রাজিয়া সুলতানাকে এই পুস্টি বাগান তৈরিতে সার্বিক ভাবে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন অত্র নেজামপুর ইউনিয়ন এর হাটবাকইল ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার মেহেদী ইমাম এবং উপজেলা কৃষি অফিস নাচোল। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আংগিনায় পারিবারিক পুস্টি বাগান স্থাপন (ইফনাফ) প্রকল্পের আওতায় রাজিয়া সুলতানাকে বিভিন্ন ধরনের বীজ,সার,নেট সহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং ট্রেনিং দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন উপসহকারী কৃষি অফিসার। পারিবারিক পুস্টি চাহিদা পুরণ,নিরাপদ জৈবিক উপায়ে ফসল উৎপাদন এবং বাড়ির পতিত জায়গার সদব্যবহার করার জন্য গ্রামের কৃষক -কৃষানীদের উদ্ভুদ্ধ করা হয় যেন তারা নিজের পারিবারিক চাহিদা নিজেরাই পুরণ করতে পারে।
এজন্য উপজেলা কৃষি অফিস নাচোল,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনী এবং প্রনোদনা দিয়ে থাকে।
রাজিয়া খাতুনের এই সমন্বিত পুস্টি খামার পরিদর্শন করতে কৃষি অধিদপ্তরের উচ্চ পদস্থ অফিসাররা আসেন এবং তাকে আরও উৎসাহ প্রদান করে থাকেন এবং ইউনিয়ন এর অনেক গৃহিণী রা তার বাগান দেখতে আসেন এবং তারাও দেখে উদ্ধুদ্ধ হয় এই রকম একটি শাকসব্জি বাগান তৈরিতে।
দর্শনার্থী গৃহিণীরা এভাবে পুষ্টি বাগান বাড়ির উঠানে
করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করে বলেন- বুঝতে না পারার অভাবে আমরা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে গেছি।আজ থেকেই আমাদের পুষ্টি বাগান তৈরি অভিযান শুরু হলো।#