বিশেষ প্রতিনিধি: কাল বুধবার(৫জুন) বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। একই দলের হিসাবে ‘সহযোদ্ধা’ বলা হলেও এবার উপজেলার ভোটে, আলাদা করে দিয়েছে সহযোদ্ধার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা। সেই লড়াইও আবার নতুন রকমের। বাঘার অনেকেই জানেন লায়েব উদ্দীন- রোকনুজ্জামানের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা। এমন সম্পর্কের কথা জানা গেছে, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান- সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোকাদ্দেসের বেলাতেও। এবার চেয়ারম্যান পদে মখোমুখি হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও রাজশাহীর জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ লায়েব উদ্দীন (লাভলু)(মোটরসাইকেল) ও আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগের জেলা কমিটির সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ রোকনুজ্জামান (রিন্টু)(আনারস)।
লাভলুর হাত ধরে ছাত্ররাজনীতি থেকে বেড়ে উঠা রিন্টুর। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছিলেন লাভলু । সেই সময় এক সাথেই ছিলেন রিন্টু। ভাইস চেয়ারম্যান পদে- উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান (নিপন) (বই)ও সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মোকাদ্দস (টিয়া পাখী)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আরেক প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মেহেদী হাসান (মিনার)(টিউবওয়েল)।
স্থানীয় ভোটার ও দল নিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনীতির বিভেদে সংসদ নির্বাচনের রেশ ধরে গুরু-শিষ্যে,সভাপতি-সম্পাদকের জম্পেশ এ লড়াই ‘দলীয় বিজয়ী এমপি বনাম পরাজিত স্বতন্ত্র এমপি’ প্রার্থীর সমর্থকদের বলে মনে হচ্ছে। তবে নির্বাচনে জয় পরাজয়ের আসল কথা বলবে ভোটাররা। জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয় স্থানীয় আ’লীগ নেতা কর্মীরা। সেই ভোটে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন রোকনুজ্জামান ও কামরুজ্জামান। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন লায়েব উদ্দীন ও মোকাদ্দেস।
এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিভক্ত হয়ে দুই বলয়ে, দুই পথে হাঁটছেন নেতাকর্মীরাও। ‘চেনা মাঠে’ লড়াইয়ে কিছু সুবিধা পাচ্ছেন লায়েব উদ্দীন ও মোকাদ্দেস। রোকনুজ্জামান-কামরুজ্জামান যে হেতু ‘নতুন মাঠে’, তাই স্থানীয় আ’লীগ নেতাদের উপর অনেকটাই ভর করে চলতে হচ্ছে তাদের। বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন রাজশাহী-৬।
সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষনে জানা গেছে,বাঘা উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে ১৮,৩৪৩ ভোট বেশি পেয়েছিল আ’লীগ দলীয় প্রার্থী। এবার কোন পথে হাটবেন ভোটাররা? এমন প্রশ্নে কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বললে, দলীয় ভিক্তির কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান,এবার দলীয় প্রতীক নাই। তারা একই দলের। তাই কারো কথায় নয়, নিজেরা বুঝে শুঝে যাকে যোগ্য মনে হবে তাকেই ভোট দিবেন। সেক্ষেত্রে কে কার? বোঝা মুশকিল। আওয়ামীলীগ স্থানীয় পদধারী নেতাদের অধিকাংশ প্রকাশ্যে রোকনুজ্জামানের পক্ষে থাকলেও অনেকে গোপনে সমর্থন দিচ্ছেন লায়েব উদ্দীনকে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর ঘটেছে পক্ষ বদলের ঘটনা। অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, প্রবীণেই ভোটারদেও আস্থা বেশি।
আগামীকাল ৫জুন ভোট পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং দেখা দেওয়ায় উপজেলার ভোটে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নানা নির্দেশনা দিয়েছে আ’লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে দলের নেতাদের প্রার্থী হতেও বাধা দেয়নি। দল থেকেও বলা হয়নি, কাকে সমর্থন করা যাবে আর কাকে করা যাবেনা। বরং এমপিদের প্রভাব বিস্তারে নিষেধ করা হয়েছে।
লাভলু জানান,এবার দলীয় প্রার্থী নাই। তার পরেও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ৫বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে সুখে দুঃখে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছি। এবার ভোটাররা মূল্যায়ন করবেন বলে আশা তার।
রোকনুজ্জামান বলেন,মানুষের ভাল কিছু করতে হলে একটা প্লাটফর্ম লাগে। সেই সুবাধেই এবার প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছি। ভোটারসহ দলীয় লোকজনের সমর্থন নিয়ে জয়ী হবেন বলে আশা তার। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে – বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি ফাতেমা খাতুন(লতা) (কলস), উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা দিল আফরোজ(রুমি) (প্রজাপতি), উপজেলা মহিলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিনা খাতুন (ফুটবল)। নিরুৎতাপ নির্বাচনে, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ভোটারদের টানার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। নিজেকে সৎ.যোগ্য ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেহনতি মানুষের পক্ষে কাজ করার কথা বলে প্রচারণা চালিয়েছেন সব প্রার্থীরাই।
ভোটারদের কথা- নির্বাচন শেষ হলে বিজয়ী প্রার্থীরা যেন ভ’লে না যান। সহকারি রির্টানিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান,৫ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬৯টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে ভোট নেওয়া হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাসহ ভোটের সকল প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বাঘা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা- ১,৬৫,৬৬৩। পুরুষ-৮৩,০০৭.মহিলা-৮২,৬৫৬।#