আবুল কালাম আজাদ……………………………………………………………….
দেশের মানুষ মুক্তি চায়। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অথনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতি কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে এই সরকার আন্দোলন করেছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বন্ধ করেছে। কিন্তু তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আজ শনিবার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজশাহীর গণসমাবেশের উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফকরুল বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে পদ্মার ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরও আপনারা এখান থেকে এক বিন্দুও সরেননি। খেয়ে না খেয়ে। কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন ধরে এখানে কাটালেন? একটি মাদ্র কারণ, আপনারা মুক্তি চান। ভয়াবহ দানবের হাত থেকে আপনারা মুক্তি চান।
১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জ্জোহা নিজের বুকের রক্ত দিয়ে দিয়েছিলেন। এইরকম অনেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
রাজশাহীর মাটি সংগ্রামের মাটি। পাশেই শুয়ে আছেন শাহমখদুম সাহেবের ভূমি এটা। এটা সেই জায়গা যেখানে মানুষ ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করেছে, বিদ্রোহ করেছে। অনেক বরেন্য মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটিতেই তারা গড়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এরমধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মুল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মুল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেযেছে? পায়নি। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
মির্জা ফকরুল বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯টা গায়েবী কোম্পানীকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। ওই সময় গানপাউডার দিয়ে একটা বাসেই ১১ জনকে হত্যা করেছিল। এই তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫টা নির্বাচন হয়ে গেল। এরা ক্ষমতায় আসার পরে কী করল? ওই ব্যবস্থা পাল্টে দিল। কেন, তারা কিছুদিন পরে বুঝতে পারল জনগণ তাদের পছন্দ করছে না। তাই সেটা পাল্টে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ আর কোন রাজনীতি দল নেই। এটা একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে করে সম্পদের পাহাড় করেছে, সাধারণ মানুষকে গরীব করছে। কয়দিন আগে ২৫ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য তাদের জেলথানায় নেওয়া হয়েছিল। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হয় না।
তত্বাবধায়ক সরকার বিধান চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথা এই দেশে কোন নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কী যেন নাম তার? ওবায়দুল কাদের সাহেব। তিনি বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বারবার কাটাছেড়া করেছো, সেই সংবিধান?
এত পেটায়, এত মামলা দেই, তারপরও বিএনপি উঠে আসে কোথ ত্থেকে? বিএনপি মাটি ফুটে বেরিয়ে আসে। এটাই বিএনপি। এ জন্য ভয় পেয়েছে। ১০ তারিখেও ভয় পেয়েছে। আমরা বলেছি, পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশটা করতে চাই। ওদের ঘুম নেই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নিজের ওপর আস্থা নেই বলে ভয় পান। এই গেল, এই গেল ভাবতে থাকে। বিএনপি এলো, বিএনপি এলো ভাবতে থাকে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে এই বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
রাজশাহীতে এটাই বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈসা।
এছাড়াও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিনা রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।#