খুলনা সিটি ভবন
# শহিদুল্লাহ্ আল আজাদ, খুলনা থেকে…………………………..
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) গঠন করা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এরপর প্রায় চার দশকেও এর এলাকা সম্প্রসারণ করা হয়নি। কেসিসির এলাকা সম্প্রসারণের উদ্যোগই নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পর ২০০৭ সালে। তবে গত ১৬ বছরেও সম্প্রসারণের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাস করানো যায়নি। এর মধ্যে দফায় দফায় প্রস্তাব সংশোধন করা হয়েছে। সবশেষ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি পার্শ্ববর্তী ১২টি মৌজার পূর্ণ অংশ ও ছয়টির আংশিক অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এটি বাস্তবায়ন হলে কেসিসির বর্তমান ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সঙ্গে যুক্ত হবে আরও ৪০ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। তবে চূড়ান্ত এ প্রস্তাবও গত দুই বছর ধরে সচিব কমিটির সভায় উত্থাপনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খুলনার নাগরিক নেতারা।
কেসিসি থেকে জানা যায়, নগরীর দক্ষিণ ও পশ্চিমের ২০টি মৌজা কেসিসির অন্তর্ভুক্ত করতে ২০০৭ সালের ২৯ নভেম্বর প্রথম প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে বিভিন্ন জটিলতায় এর অগ্রগতি হয়নি। এরপর ২০১৩ সালে নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকায় হরিণটানা, লবণচরা ও আড়ংঘাটা নামে তিনটি থানা স্থাপন করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ওই তিন থানাসহ ছয়টি মৌজা কেসিসির অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়। সবমিলিয়ে ২৬টি মৌজা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির ওই প্রস্তাব ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেসিসির সাধারণ পরিষদ অনুমোদন দেয়।
এরপর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি সংশোধিত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নগর কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাব পাওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামত জানতে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত ২৬টি মৌজা ছিল খুলনা-১, ৪ ও ৫ আসনের সীমানার মধ্যে। পরে খুলনা-১ ও ৫ আসনের সংসদ সদস্য ১২টি মৌজার বিষয়ে তাদের আপত্তি জানান। এমপিদের আপত্তি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের মতামতে ফের প্রস্তাব সংশোধন করা হয়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবনায় ১৪টি মৌজার ৪৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা কেসিসিতে সংযুক্তির কথা জানায় জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর সচিব কমিটির সভায় বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি ১২টি মৌজার পূর্ণ অংশ ও ৬টি মৌজার আংশিক অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২৮ জুন প্রস্তাবনাটি সচিব কমিটির সভায় উত্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো হয়। তবে এরপর দুই বছর ধরে সেখানেই পড়ে আছে প্রস্তাবটি।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ প্রস্তাবনায় পুরোটা অন্তর্ভুক্ত হবে মাথাভাঙ্গা, খোলাবাড়িয়া, হরিণটানা, ডুবি, আলুতলা, কৃষ্ণনগর, ঠিকরাবন্দ, চক মথুরাবাদ, আড়ংঘাটা, তেলিগাতি, যোগীপোল ও শ্যামগঞ্জ মৌজা। এ ছাড়া সাচিবুনিয়া, চক আসানখালি, বিল পাবলা, দেয়ানা, গিলাতলা ও আটরা মৌজার আংশিক অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী ১৮টি মৌজার ৪০ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নতুন যুক্ত হওয়ার কথা। তবে দেড় দশকেও এলাকা সম্প্রসারণের প্রস্তাব পাস না করাতে পারা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার নাগরিক নেতারা।
খুলনায় সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি কুদরত ই খুদা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সিটি করপোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে রূপসা সেতু থেকে বাইপাস সড়ক ধরে আটরা পর্যন্ত নতুন জনবসতি গড়ে উঠেছে। সিটির কাছে থেকেও করপোরেশনের অনেক সুযোগ-সুবিধাই তারা পান না। এলাকাগুলো সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলে তারা নাগরিক সেবা পেত।
এ বিষয়ে কেসিসির এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, এলাকা সম্প্রসারণের প্রস্তাবনা সচিব কমিটির সভায় উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। কেসিসির পুনরায় নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এলাকা সম্প্রসারণ প্রস্তাবনাটি দ্রুত পাস করাতে চেষ্টা করবেন।#