মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর থেকে মোহনপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক মেরামতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দেড় মাস না যেতেই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগে পড়ছেন ওই অঞ্চলের হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং পাথর কম দেওয়ায় মেরামতের পর অল্প সময়েই সড়কটি ভেঙে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রিকশাভ্যান, অটোরিকশা ও ট্রাক চলাচলের সময় সড়কের খানাখন্দে আটকে পড়ছে। বিশেষ করে তানোর গোল্লাপাড়া বাজার এলাকায় একটি ড্রেন নির্মাণেও সিডিউল মোতাবেক কাজ না হওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তানোরের কাশিমবাজার-বায়া পর্যন্ত এলজিইডির সড়ক ভেঙে পড়ায় বিকল্প হিসেবে তানোর-মোহনপুর সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। আশির দশকে এই সড়ক দিয়েই মানুষ রাজশাহী শহরে যাতায়াত করতেন। কিন্তু বর্তমানে এটি মূলত বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহৃত হলেও ভাঙাচোরা অবস্থায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ঝোপঝাড় আর গাছের ডালপালা বেড়ে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত রাস্তা ঢেকে ফেলেছে। সেগুলো অপসারণেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানান স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, মোহনপুর উপজেলার খানপুর ও আমরাইল-পুল্লাকুড়ি এলাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরাসরি সড়কের ওপর দিয়ে নামছে। এতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া সড়কের ওপর অপরিকল্পিতভাবে বড় বড় ইট ফেলার কারণে অটোভ্যান, উল্কাগাড়ি ও পিকআপ আটকে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন ঝিনুক জানান, “এই সড়ক মেরামত কাজে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এজন্য কোনো অর্থও বরাদ্দ হয়নি। কেবল অফিসের গাড়ি, লোকবল ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে মেরামত করা হয়েছে।” তবে অসমর্থিত একটি সূত্র দাবি করেছে, প্রায় ১২ কোটি টাকার কোটেশন দেখিয়ে গোপনে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় এবং মেরামতের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। এতে নিম্নমানের কাজে দেড় মাসের মধ্যেই রাস্তা ভেঙে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমরাইল-পুল্লাকুড়ির মজিদ, মহসিন ও মেছের আলী বলেন, “আমরা প্রতিদিন এ সড়ক ব্যবহার করি। রাস্তাটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটেও যেতে কষ্ট হচ্ছে।” এক ভ্যানচালক রুস্তম আলী অভিযোগ করেন, “প্রায় দেড় মাস আগে গর্তে কিছু পাথর দিয়ে পোড়া মবেলের মতো গন্ধযুক্ত জিনিস ফেলে মেরামত করা হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই সড়কটি আবার ভেঙে পড়ে।”
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহেদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন ঝিনুক আবারও জানান, “কোনো ঠিকাদার ছাড়াই অফিসের লোকবল দিয়ে কাজ করা হয়েছে। তথ্য জানতে চাইলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে হবে।” এলাকাবাসী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।#