# আবুল কালাম আজাদ ……………………….
বাংলাদেশ রেলওয়ে বহরে লক্কড়-ঝক্কড় আর বয়সের ভারে নজ্জূ মেয়াদ উর্তীন্য অধিকাংশ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ)। এ কারণে চলন্ত অবস্থায় যখন তখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে থাকে মাঝ পথে।ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছো যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে যাত্রীরা পড়ছেন সীমাহীন বিপদে।
তথ্য বলছে গত ৩ মাসে চলন্ত অবস্থায় ট্রেনের এ বুড়ো ইঞ্জিনগুলো মাঝপথে বিকল হয়েছে শতাধিক বার।এর মধ্যে চলন্ত অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চলে ৩২ বার ,আর পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭০ বার। মূলত জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত না করায় বারবার এমন গ্যাঁড়াকলে পড়ছে রেল ইঞ্জিন।
সংশ্নিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, ব্রেক প্রেশার কমে যাওয়া, ইঞ্জিন অস্বাভাবিকভাবে গরম হওয়া, বৈদ্যুতিক সমস্যা ও যন্ত্রপাতি কাজ না করার কারণে সাধারণত ইঞ্জিন বিকল হয়। চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে লোকোমাস্টারকে (চালক) মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিয়ে ইঞ্জিন চালুর চেষ্টা করা হয়। বড় কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনটি চালানো হয় এবং বিকল ইঞ্জিন মেরামতের জন্য আরেকটি ইঞ্জিনের সহায়তায় ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়। এ সবকিছু করতে গিয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী রেলের ইঞ্জিনবিকল ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় পার্বতীপুর ওয়ার্কশপে আর পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী রেলের ইঞ্জিন বিকল কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে নেওয়া হয়। রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী ওয়ার্কশপে একটি ইঞ্জিন দেড় বছর পরপর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি সারানো হয় ইঞ্জিনের নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটিও।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে রয়েছে ২৬৩টি ইঞ্জিন। এগুলোর মধ্যে ১৭৫টিই মেয়াদোত্তীর্ণ, যা মোট ইঞ্জিনের ৬৭ শতাংশ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের মধ্যে ৭৮টি ৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো। এমনকি ১৯৫৩ সালে কেনা ৯টি লোকোমোটিভও এখন ব্যবহার হচ্ছে। অথচ সাধারণত একটি ইঞ্জিনের সেবার আয়ুস্কাল ধরা হয় ২০ বছর। ২৬৩ ইঞ্জিনের মধ্যে বর্তমানে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহার হচ্ছে ১০৫ টি ইঞ্জিন।আর পূর্বাঞ্চলে ব্যবহার হচ্ছে ১৫৯টি ইঞ্জিন। এরমধ্যে অধিকাংশ ইঞ্জিন মেয়াদ উত্তীর্ণ।ফলে ট্রেন পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়েকে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত মে মাসে ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ২৮ বার, জুনে ২৯ বার আর জুলাইয়ে ১৩ বার। এর মধ্যে অন্তত ৪৬ বার ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ার পর যাত্রীদের ঘটনাস্থলে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। কোনো স্থানে একটি ইঞ্জিন বিকল হলে অন্য ট্রেনও অনেক সময় আটকা পড়ে। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেনেরও ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় মেকানিক্যাল অফিসার( লোকো) বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করছে১০৫টি ইঞ্জিন। এর মধ্যে ৪২ টি ইঞ্জিন মেয়াদ উত্তীর্ণ । এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি ৫০ বছরের উর্ধ্বে।পথিমধ্যে বিকল হওয়া ইঞ্জিনগুলি তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকসেডে ছোটখাটো ত্রুটি গুলি সারানো হয়। আর বড় ধরনের ত্রুটি হলে সেগুলি পার্বতীপুর সেডে পাঠানো হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, লোকো বল স্বল্পতা থাকা সত্বেও আমরা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ইঞ্জিন গুলো সচল রাখার জন্য। এরপরও নানা কারণে ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। ইঞ্জিন বিকল হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের মাধ্যমে তা সচল করার চেষ্টা করি। কারণ ইঞ্জিন বিকলের সঙ্গে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি জড়িত।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ইঞ্জিনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা মেরামত করা যায় না। এই পরিস্থিতিতেও ইঞ্জিনের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য আমরা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপরও নানা কারণে ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে।
রেলওয়ে ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপের’ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে সাধারণত ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ইঞ্জিনের বড় কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সারানোর জন্য ওয়ার্কশপে আনা হয়। লোকো বল সমস্যাসহ নানা সমস্যার মধ্যেও আমরা কাজ করার চেষ্টা করি।
আর ইঞ্জিনের নিয়মিত যেসব সমস্যা অর্থাৎ ত্রুটি থাকে, সেগুলো সার্ভিসিং করা হয় স্থানীয় লোকোশেডে।।