নাজিম হাসান,রাজশাহী :
কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহীর আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার আবেদনে আসামি হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৫ জানুয়ারী) দুপুরে প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু (৫০) রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। আদালতে তাঁর পক্ষে আইনজীবী আবদুল মালেক রানা মামলার আবেদন উপস্থাপন করেন।
আদালতে রিন্টুর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পূর্নবাসন বিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক লিমনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা গিয়েছিলেন।
মামলার আরজিতে দেখা গেছে, আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান কামাল, আনিসুল হক, হাজী মো. সেলিম, সোলায়মান সেলিম, ইরফান সেলিম, মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনির ওরফে স্প্রিট মনির ও এএস শরিফ উদ্দিন ওরফে বø্যাক শরিফ।
এছাড়াও তৎকালীন আইজিপি, তৎকালীন আইজি প্রিজন, তৎকালীন ঢাকা ও রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার শাহাদত হোসেন, কারা চিকিৎসক আবু সায়েম, কয়েদি রাব্বানী ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু কাহার আকন্দের নাম রয়েছে তালিকায়।
ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর চর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসির উদ্দিন পিন্টু। পরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। পিলখানা হত্যা মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিল। এ ছাড়া একটি অস্ত্র লুটের দায়ে তাঁর ১০ বছরের কারাদন্ড হয়েছিল। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। তবে আদালতে সাজা হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচন করতে পারেননি।
নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল পিন্টুকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েক দিন পরে তিনি অসুস্থ বোধ করলে ২৬ এপ্রিল তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তাকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়। পরে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিঠি দিয়ে কারাগারে চিকিৎসক ডাকা হয়। চিঠি পেয়ে একজন চিকিৎসক গেলেও তাকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল না। ২০১৫ সালের ৩ মে দুপুরে কারাগার থেকে পিন্টুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ কারণে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ এর ৭ (১) ধারামতে আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু বলেন,আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তা ও বিএনপির প্রতি তার অবদানকে ভয় পাচ্ছিল হাসিনা সরকার। তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে পিলখানা মামলায় ফাঁসিয়ে সাজা দেওয়া হয়। এরপর কারাগারে নিয়ে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন,গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের কারণে আমার ভাই প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ আই হসপিটালে নিজ খরচে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসা চলবে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে তাকে ঢাকায় না রেখে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তাঁর চিকিৎসা না করে সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়।
নাসিম আহমেদ রিন্টুর আইনজীবী আবদুল মালেক রানা জানান,আদালতে মামলার আরজি জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত বক্তব্য শুনেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আদালত কোনো আদেশ দেননি।
আজই বিকেলে কিংবা পরে আদালত আদেশ দিতে পারেন। তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এটি কোনো তদন্ত সংস্থার কাছে পাঠানো হতে পারে বলে জানাগেছে।#