আগামী ১৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আজ বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রার প্রথম দিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কিছুটা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। প্রচন্ড গরমের মধ্যেই তাদের স্টেশনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনেকটা সময়। এতে বিশেষ করে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নারী ও শিশুরা।
বুধবার সাড়ে ১১টায় কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুর এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ১ নম্বর প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছে। তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১১টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটিও পৌঁছায়নি প্লাটফর্মে। সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি স্টেশনেই পৌঁছায়নি।
সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যাওয়া ১৫টি ট্রেনের সবকটি বিলম্বে ছেড়েছে। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলে সেটি ছেড়েছে ৮টার পর।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদযাত্রার প্রথম দিন হিসাবে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শুরুর দিকের দুইটি ট্রেনের কোচ সংযোজন ভুল হওয়ায় সেগুলো সংশোধন করতে আরও ঘণ্টাখানেক বেশি সময় লেগেছে। ফলে এই ট্রেনগুলোর বিলম্বের জের অন্য ট্রেনগুলোতেও টানতে হচ্ছে। এর ফলে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
মো. কামাল হোসেন রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী, তিনি যাবেন কুড়িগ্রাম। তিনি বলেন, ‘স্টেশনে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে এসেছি। ৯টা ১০ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা। এখন পৌনে ১০টা বাজে, কিন্তু ট্রেন ছাড়েনি।’ এসময় ট্রেনের এই বিলম্ব নিয়ে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন।
গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনও টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঢাকা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায় অবাঞ্ছিত কোনও মানুষকে দেখা যায়নি।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে প্লাটফর্ম এলাকায় প্রবেশমুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে।
প্লাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) দেখা গেছে, যাত্রীদের টিকিট চেক করতে। যাদের টিকিট নেই, তারা ১-৬ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তারপর যাত্রীরা প্ল্যাটফর্ম হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেনে উঠছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, বাস ও ট্রেন স্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিলারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার থেকে ১০ জোড়া (২০টি) ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু করছে। ঈদযাত্রার ভিন্ন ভিন্ন দিনে চলাচল করবে এসব ট্রেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষের ট্রেন যাত্রার সুবিধার্থে এই ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রথম স্পেশাল ট্রেনটিই যেতে পারেনি সময়মতো, ঢাকা ছাড়তে হয়েছে ১ ঘণ্টা দেরিতে।
রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১, ২, ৩ ও ৪) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৮ ও ৯) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ১২ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ও ঈদের পরে সাত দিন চলাচল করবে।
এছাড়া পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল (১৫ ও ১৬) জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে আগামী ১৩-১৫ জুন (৩ দিন) ও ঈদের পরে ২১-২৩ জুন (৩ দিন) চলাচল করবে।
অন্যদিকে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১১ ও ১২) ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১৩ ও ১৪) ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ; গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল (১৭ ও ১৮) পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর; গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল (১৯ ও ২০) ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও রুটে শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনও ট্রেন দেরিতে আসে তাহলে ট্রেনগুলো এইখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। কারণ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং, ওয়াটারিং করা হয়। এর জন্য প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ট্রেনে ঈদ যাত্রা শুরু। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। ঠিক সময়ে ট্রেন যাতে ছেড়ে যেতে পারে সে চেষ্টা চলছে।#বাসস