মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে ডিজিটাল পোস্ট অফিসে জমানো টাকা ফেরত পেতে অফিসের ভিতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা পারুল নামের এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে নিশ্চিত করেন (ভারপ্রাপ্ত) পোস্ট মাষ্টার আব্দুল মালেক। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পোস্ট মাষ্টার থানায় মোবাইল করলে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণ করেন। এর আগেও অফিসের ভিতরে গাছের ডালে রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ওই দিনেও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।গত বৃহস্পতিবার সকালে কুঠিপাড়া গ্রামে অবস্থিত ডিজিটাল পোস্ট অফিসে ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি।
এখবর ছড়িয়ে পড়লে পাশ্ববর্তী আরো কয়েকজন গ্রাহক এসে অফিস ঘেরাও করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে গ্রাহকদের নিয়ে বিভাগীয় ডাক অফিসে রওনা দেন ভারপ্রাপ্ত পোস্ট মাষ্টার আব্দুল মালেক। প্রতি নিয়তই গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পেতে অফিসে ভীড় করছেন। কিন্তু টাকা না পেয়ে আত্মহনন সহ নানা ধরনের গালমন্দ করছেন অসহায় গ্রাহকরা । ফলে পোস্ট অফিসের মত নিরাপদ জায়গায় টাকা রেখেও লোপাটের ঘটনায় চরমভাবে মর্মাহত অসহায় গ্রাহকরা। এমনকি টাকা ফেরতে পাবে কিনা এনিয়েও সন্দিহান গ্রাহকরা।
এদিকে স্বামী পরিত্যক্তা পারুলের আর্তনাদে পুরো গ্রামবাসী অফিসে ভীড় করেন। পারুলের বাড়ি তানোর পৌর এলাকার গোকুল গ্রামে। সে ইসরাফিলের মেয়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, পোস্ট অফিসের ভিতরে দেয়ালের সাথে দাড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে পারুল আর্তনাদ করছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন পুলিশ প্রশাসনের লোকজন। পারুলের একই কথা আমার জমানো টাকা ফেরত চাই তা না হলে অফিস থেকে আমার লাশ বের হবে। পুলিশ পারুলের নাম ঠিকানা লিখছেন আর বলছেন মারা গেলে টাকার কি হবে। আপনি বেঁচে থাকলে কোন না কোন ব্যবস্থা হবেই। আপনার ছোট বাচ্চা আছে আত্মহনন করবেন কেন। আপনি মারা গেলে বাচ্চার কি হবে। এসব কথা বলেও পারুলকে শান্ত করতে পারছিল না প্রশাসনের লোকজন। প্রায় ঘন্টা ধরে চলে এমন ঘটনা।
পরে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পারুলসহ আরো কয়েকজন গ্রাহককে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পোস্ট মাষ্টার আব্দুল মালেক বিভাগীয় অফিসে রওনা দেন। তার আগে অফিসের ভিতরে পারুল বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে ২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। আমি একেবারেই অসহায়, সম্বল বলতে এই ২ লাখ টাকা। গত প্রায় ১৫ দিন আগে পোস্ট মাষ্টার আমার টাকা ফেরত দিবেন এমন কথা দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার আমার পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু আমি এসে টাকার কথা বলা মাত্রই পোস্ট মাষ্টার সাব জানিয়ে দেয় যে পোস্ট মাষ্টার টাকা আত্মসাত করেছে তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। মামলার রায় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হল কিনা সেটা আমি কি করে বলব, আমার টাকা ফেরত পেলেই হলো। আমি অসহায় গ্রাহক মামলা মোকদ্দমার কি বুঝি। টাকা জমা রেখেছি মেয়াদ শেষ হয়েছে টাকা ফেরত দিবে ঝামেলা শেষ।
গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে আজ না কাল, এমাসে না সামনের মাসে টাকা ফেরত দিবে বলে আমাকে হয়রানি করাচ্ছে। যেখানেই নিয়ে যাক টাকা ফেরত না পেলে আমি অফিসে এসে আত্মহত্যা করব বলে কাঁদতে কাঁদতে পোস্ট মাষ্টারের সাথে বিভাগীয় অফিসে যান পারুলসহ কয়েকজন।
এবিষয়ে (ভারপ্রাপ্ত) পোস্ট মাষ্টার আব্দুল মালেক জানান, প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা আত্মসাত করেছে আগের পোস্ট মাষ্টার মুকছেদ। সে সাসপেন্ড হয়ে আছেন। দুদকে মামলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয় টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। কতজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সঠিক ভাবে বলা যাবে না। তবে ৬০ থেকে ১০০ জন গ্রাহক হতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আমিসহ সাসপেন্ড হওয়া পোস্ট মাষ্টার মুকছেদের মেয়ে জামাইকে ডেকে টাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সাব জানিয়ে দিয়েছে মামলায় কি হচ্ছে দেখা যাক।
এসব অনেক প্রক্রিয়ার বিষয়, সময় লাগবে। প্রতিনিয়তই গ্রাহকেরা আসছেন গালমন্দ করছেন, সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। আমি চাকুরী করি, কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা দিবেন, সে মোতাবেক আমাকে কাজ করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে গ্রাহকদের বিভাগীয় অফিসে নিয়ে যাচ্ছি।
এবিষয়ে রাজশাহী বিভাগের ডাক অফিসের ডেপুটি পোষ্ট মাস্টার জেনারেল মনিরুজ্জামানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুকছেদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত শুরু হবে। সে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। গ্রাহকেরা টাকা পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত করে টাকা আত্মসাতের প্রমান পেয়ে তাকে সাসপেন্ডসহ মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত রায় না দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। তবে দেরি হলেও গ্রাহকেরা টাকা পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
প্রসঙ্গত, পোস্ট অফিস থেকে টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে চলতি বছরের (১৮ মার্চ) সোমবার সকালে রাজশাহী ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে গ্রাহকদের কাগজপত্র দেখা শুরু করেন। এ সময় পোস্ট অফিসে একের পর এক গ্রাহকরা উপস্থিত হতে শুরু করেন। অফিস থেকে টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা শুনে গ্রাহকরা অফিসের মধ্যেই উত্তেজনা শুরু করেন। এ সময় ডেপুটি জেনারেল কর্মকর্তা গ্রাহকদের শান্ত করে তাদের কথা শুনেন এবং আশ্বস্ত করে তাদের কষ্টের অর্জিত টাকা ফিরিয়ে দেবার জোর চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।#