# নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি…………………………………………………………
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই। কবি যতন্দ্রি মোহর বাগচির আবেগ ভরা লেখা এ কবিতার বাঁশ বাগান এক সময় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী সম্পদ ছিল। এবং চাষ করা হতো ব্যবসায়ীক ভাবে। যা অযত্ন আর অবহেলায় গড়ে উঠত অল্প খরচে। সেই বড় বড় বাঁশ ঝাড় আজ আর চোখের সামনে নেই। দেখা যেতো গ্রামে গ্রামে যে হারে বাঁশ ঝাড় তা এখন আর দেখা যায় না চোখে। এক সময় বাংলার গ্রামঞ্চলের প্রসুতির নাড়ি কাটার জন্য ব্যবহৃত হত ধাঁরালো বাঁশের চিকন চাচ। এবং বাঁশ ছাড়া মৃত্যুর দাফনও হয় না। সে জন্যই বলা হতো জন্ম থেকে মৃত্যু র্পযন্ত বাঁশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীর্কায।
এছাড়া বাড়ি ঘর নির্মাণ, সবব্জির মাচা তৈরী, বেড়া দেওয়া, চারা গাছের খাঁচাসহ কুুটির শিল্পে ব্যবহৃত এই বাঁশ। আগের দিনে বাঁশ ঝাড় ছিল অহংকারের বিষয়। কোন বংশের লোকের কত বিঘা বাঁশ আছে সেটাই ছলি র্গভের বিষয়। এখন আর তা খুঁজে পাওয়া যায় না।এবং আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বনজ সম্পদ বাঁশ বাগান। এক সময় এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে বাঁশ কেটে বিক্রি করা হতো হাটে বাজারে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের কুটির শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা তা ক্রয় করে নিয়ে যেতো। কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এই দেশে কাগজ তৈরীতেও ব্যাপক অবদান ছিল।
যে বাঁশ বন্যা,বাদলে,গরীবের বাড়ি তৈরীতে ও ধনী-গরীব সকলের মৃত্যুতে প্রধান সহযোগী ছিল বাঁশ। সেই বাঁশ অযতেœ আর অবহেলায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই উপজলো থেকে। আগের দিনে অনেক পরিবারই ব্যবসায়ীক ভাবে বাঁশ ঝাড়ের খড়কুটা,ছায় এনে বাঁশ ঝাড়ের রনাবনো করতেন। এখন আর সেই পুরনো ঐতিহ্য খুজে পাওয়া যায় না। এবং নেই বাঁশ বাগান বা আর তৈরী হয় না বাঁশের সাঁকো। এবং কুটির শিল্পের সাথে জড়িতরা বাঁশের অভাবে উক্ত পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে। বাঁশ ঝাড়ের এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার আগ্রাহে আর নেই বাগান মালিকদের। এছাড়া বাঁশের বিভিন্ন কাহিনীও রয়েছে, যেমন বাঁশ দিয়ে তৈরী হতো বাঁশি,আর সেই বাঁশির মাতাল করা সুরে মুগ্ধ হতো ছোট বড় সব শ্রেণীর মানব সমাজ। পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লাঠি খেলাতে ব্যবহৃত হত বাঁশ দিয়েই তৈরী লাঠি।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় এক সময় প্রতিটি জমির মালিকদের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ ছিল বাঁশ ঝাড়। আর আজ সেই বাঁশ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাঁশের ঝাড়গুলো নির্মূলভাবে কেটে বিনাশ করে সেখানে আম,জাম,লিচু,কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের বাগান তৈরী করা হয়েছে। এবং অবহেলায় বাঁশের ঝাড় গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে এমন অবহেলা চলতে থাকলে মানুষ মরে যাওয়ার পর কবরে যে বাঁশের চালি বা খাপাচি দেওয়ার জন্য যে বাঁশ দরকার হয় তাও পাওয়া যাবে কিনা এ অশংকা করছেন বাগমারা উপজেলার কিছু সচেতন মানুষজন। তবে বাঁশ ঝাড় টিকিয়ে রাখতে সরকারী ভাবে বিশেষ ভূিমকা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এখানকার র্সবস্তরের জনসাধারণ।
এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে,বর্তমানে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা এলাকায় ৩ হাজার ৭ শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে বাঁশ বাগান রয়েছে। যা আগে ছিলো ১০ হাজার ৮ শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে।#