# বিশেষ প্রতিনিধি…………………………………………
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারিভাবে অপারেশন চালু হওয়ায় বিনা টাকায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করছেন আফসানা খাতুন ও সানজিদা খাতুন। চিকিৎসক-নার্সরা স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করান। তবে স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করেন মুক্তি খাতুন ও জেসমিন খাতুন। রোববার (২৩-৭-২০২৩) প্রসববেদনা নিয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থা কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তারা। নার্সদের মাধ্যমে দু’জনের স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করানো হয়। তারা জানান, চিকিৎসক ও নার্সরা খোঁজখবর নিচ্ছেন, পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনজেকশন দিচ্ছেন।
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কার্যক্রম শুরু হওয়ার ২৯ বছর পর প্রথম ওটি চালু হয় গত বছরের ২৬ অক্টোবর। এর পর থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শতাধিক ডেলিভারি করানো হয়েছে সিজারের মাধ্যমে। মাসে ৩০-৪০ জনের স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এছাড়াও মাইনর অপারেশন হচ্ছে এখানেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবে উৎসাহিত করা হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে সিজার করা হয়।
ডেলিভারি সহ গড়ে প্রতিদিন ৬শ’ জন চিকিৎসা নিতে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর মধ্যে শিশু-১৫০ জন,মহিলা-৩০০জন ও পুরুষ-১৫০জন। কম খরচে এসব রোগিদের রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ২৪ ঘণ্টা ইসিজি, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষ্মা নির্ণয়, চোখ ও দাঁতের চিকিৎসাসহ আধুনিক ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসসিডিসি এর উদ্যোগে বহুমুত্র (ডায়াবেটিস),উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটিনশন) রুগিদের চিকিৎসাসহ বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। তবে রোগী পরিবহণে ১টি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার, বিভিন্ন পরীক্ষা চালু হওয়ায় সন্তুষ্ট রোগি ও এলাকার জনগণ।
খাদ্য তালিকায় নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ মাসেই চালু হচ্ছে ডিজিটাল এক্স-রে। সরেজমিন রোববার (২৩-৭-২০২৩) সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আন্তঃ বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ডেঙু আক্রান্ত দুই রুগি। মতলেব নামের একজন বলেন, এখানে আসার পর তেমন কোন ওষুধ তাকে বাইরে থেকে কিনতে হয়নি। সময়মতো নার্সরা ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, আগে জানতেন সরকারি হাসপাতালে সেবা নেই। এখানে এসে দেখেন তার উল্টো।
আওয়াল নামের একজন জানান,এমন পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালো সেবা পেলে মানুষ কখনো প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবকাঠামো উন্নয়নে যেমন এগিয়ে তেমনি নিরাপত্তা ও আধুনিকতায় এগিয়ে রয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনে ফুলের বাগান ও বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা। অপেক্ষমাণ রোগী ও স্বজনদের বসার জন্য রয়েছে আধুনিক আসন। মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স। উপজেলা স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে অনন্য সফলতা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
মোমিন হোসেন নামে একজন জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। উন্নয়নসহ সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও অফিস সময়ের অতিরিক্ত সময়েও তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে। সাব্বির নামের আরেকজন বলেন, কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের চেয়েও রোগিরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।
একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়-এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুন বলেন, তারা রোগীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
সংল্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোভিট-১৯ এর ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে প্রথম ও ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে ৭০ শতাংশ। ৩য় ও চতুর্থ ডোজে টিকা দেওয়া হযেছে ৫০ শতাংশ। মাধ্যমিকের সকল ও প্রাথমিক স্কুল শাখার (৫-১১) বছরের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি সূষ্ঠভাবে সম্পর্ণ করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০০৮ সালে। ১১ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মুঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৭জন। মিডওয়াফারি ৪জন সহ বর্তমানে কর্মরত নার্স রয়েছে ১৮ জন। চর্ম ও যৌন, মেডিসিন এবং অর্থোপেডিক জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আশাদুজ্জামান বলেন, গত এক বছর আগে এখানে যোগদানের পর নিজের অর্থায়নে আইপিএস ব্যবস্থা করেছি। অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে। কেবিনে এসি দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয় নার্সদের। স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। প্রধান ফলোক থেকে শুরু করে বর্জ ব্যবস্থাপনা নির্মাণ ও গন টয়লেট স্থাপনা, জনসচেতনার জন্য এলসিডি মনিটর স্থাপনা, মা ও শিশুদের জন্য এ এনসি কর্নার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে আউটডোরে চিকিৎসা প্রদান, আবাসিক এলাকা পরিষ্কার রাখা সহ সকল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবার মান বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের উন্নয়ন এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। আধুনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তর সহ চেষ্টা করছি প্রাইভেট হাসপাতালমুখী রোগিদের ফিরিয়ে আনতে।
ডা. আশাদুজ্জামান আরও বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (সংসদ সদস্য, বাঘা-চারঘাট), শাহরিয়ার আলমের অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনায় পুরো কার্যক্রম হয়েছে আরও বেগবান। সার্বিক দিক-নির্দেশনায় নেপথ্যে রয়েছেন সুযোগ্য সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাঈদ মোঃ ফারুক।#