মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি :
এক সময় বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ জীবনের অঙ্গ ছিল গরুর গাড়ি। মাঠে-ঘাটে, রাস্তা-ঘাটে গরুর গাড়ির শব্দে মুখরিত হতো গ্রামের সকাল-বিকেল। পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে যাত্রী চলাচলে এই বাহন ছিল কৃষক ও গ্রামবাসীর নির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু যান্ত্রিক যুগের বিকাশের সাথে সাথে আজ সেই গরুর গাড়ি যেন কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে মোটরসাইকেল, তিন চাকার অটো গাড়ি, ইজিবাইক ও ট্রাক। দ্রুত গতি ও কম সময়ের কারণে মানুষ ঝুঁকছে এই যানবাহনের দিকে। ফলে একসময়ের জনপ্রিয় গরুর গাড়ি এখন পরিণত হয়েছে শুধু স্মৃতির পাতায়, কিংবা কোনো মেলায় প্রদর্শনীর জিনিসে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব গণেশ বলেন, “আগে দিনে ৩-৪টা করে মালভর্তি গরুর গাড়ি নিয়ে যেতাম বাজারে। এখন কেউ আর ভাড়া করে না। গাড়িও পড়ে আছে এক কোণায়।” তাঁর কণ্ঠে হতাশা আর বুকের ভেতর চাপা বিষণ্নতা স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরুর গাড়ি শুধু পরিবহনের মাধ্যমই নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছিল কৃষকের আত্মপরিচয়, শিশুদের খেলাধুলার স্মৃতি, এবং মাটির ঘ্রাণ মেশানো জীবনের এক নিঃশব্দ সাক্ষ্য। বর্তমানে বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের কিছু এলাকায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি গরুর গাড়ি টিকে আছে। কেউ কেউ শখ করে ব্যবহার করেন, কেউবা সংস্কৃতি ধরে রাখতে ঘরোয়া উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী টিকে থাকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
যান্ত্রিকতার গতি জীবনের প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু ঐতিহ্য না থাকলে জাতির শিকড় হয় দুর্বল। হারিয়ে যেতে বসা গরুর গাড়ির এই করুণ পরিণতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা কি সত্যিই এগিয়ে যাচ্ছি, নাকি পিছিয়ে পড়ছি মানুষের ছোঁয়া ও প্রকৃতির বন্ধন থেকে?।#