মোঃ সুমন, রাজশাহী…………………………………………………..
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কিশোরপুর চৌমাদিয়া গোকুলপুর খেয়া ঘাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে বাড়তি টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। খেয়া ঘাটে তাদের সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে খেয়া পাড়াপারের হাজার হাজার যাত্রী।
জানা গেছে, উপজেলার গোকুলপুর খেয়া ঘাট দিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। বিশেষ করে এই উপজেলার সাথে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ফিলিনগর উপজেলার সিমান্ত রয়েছে। সেই সুবাদে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে যেতে নদী পারাপারে যাত্রীদের এই খেয়া ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। গোকুলপুর, কিশোরপুর, চৌমাদিয়া খেয়াঘাট নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের শর্তে চলতি বছরের জন্য (বাংলা-১৪২৯) ইজারা গ্রহণ করেন শাহ আলম রেজাউলসহ কয়েকজন ইজারাদার। ঘাটে টোলরেট চার্ট টাঙিয়ে যাত্রীদের নিকট থেকে সরকারি নির্ধারিত হারে টোল আদায়ের কথা থাকলেও ইজারাদার ইচ্ছে মত আদায় করছে টোল।
এ নিয়ে যাত্রী ও টোল আদায়কারিদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঘটছে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা প্রসাসক বরাবর খেয়া ঘাটের বাড়তি টাকা (চাঁদা) আদায়ের ব্যাপারে অভিযোগ করেও কাঙ্ক্ষিত সুরাহা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভুক্তভুগিদের পক্ষে খেয়া ঘাটের নিয়ম বহির্ভূত বাড়তি টোল আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন অনেকে। এদের হাত থেকে প্রতিকার পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে আশানারুপ প্রতিকার না পেয়ে ঘাটের অনিয়মের ঘটনা গণমাধ্যম কর্মিদের জানান ভুক্তভোগীরা।
তারা বলেন, পারাপারের সময় ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের নিকট থেকে ইচ্ছে মত টোল আদায় করেন। টাকা কম হলেই যাত্রীদের সঙ্গে দূব্যবহার ও হাতের ব্যাগ নিয়ে টানা টানি শুরু করে বলেও অনেকের অভিযোগ। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলেই শুরু হয় যাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতন। যদি কোন প্রবাসী পারাপারের জন্য আসেন এবং তা হয় সন্ধার পর তাহলেতো কোন কথায় নেই। টোল আদায়কারীরা তখন আনন্দে মেতে উঠেন। কারণ বিদেশ ফেরত যাত্রীদের কাছ থেকে ৫/৬ হাজার কখনও বা ৮/১০ হাজার টাকা দাবি করে বসে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে নানা ভাবে হয়রানি করা হয়।
অভিযোগ আছে, ইজারাদারের লোকজন প্রভাব খাটিয়ে অনেক যাত্রীকে শারীরিক ভাবেও নির্যাতন করে থাকেন। পারাপারে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি জানান এই খেয়াঘাটে একজন যাত্রীর নিকট থেকে ৯০ (৭০+২০) গুনতে হয়। তাতে করে একজন যাত্রীকে ১৮০ টাকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। মটর সাইকেল থেকে নেয়া হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং রাত আটটার পরে মটর সাইকেল পারাপার করতে চাইলে তাদের টাকার অংকটা বেড়ে যায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীদের সাথে থাকা ব্যাগ, আইপি এস এর ব্যাটারি, কাঠ, টিন, সিমেন্ট, স্যালো মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল থেকে ইজারাদাররা তাদের ইচ্ছে মত টোল আদায় করছেন। স্থানীয় কৃষক সুরুজ,রাজিব মাইনুলসহ শতাধিক কৃষক অভিযোগের করে বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ খাদ্য সংকটে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য আমাদের দেশের মমতাময়ি প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে ভর্তূকী বাড়ানোসহ নানামুখী সাহায্য সহযোগীতা করছেন। যাতে করে ফসল উৎপাদনে ঘাটতি না হয়।
এই উপজেলার ৮০ ভাগ ফসল উৎপাদন হয় চরাঞ্চল থেকে। তাই সেখানে প্রতিদিন শত শত কৃষককে খেয়া পার হয়ে আবাদি জমিতে রোপন, বপনসহ পরিচর্যার কাজে যেতে হয়। তাই আমরা দীর্ঘদিন থেকে নিজেদের নৌকায় সার, বীজসহ শ্রমিক বহন করি। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের নৌকা চলাচলে বাধাদান করেন ইজারাদারের লোকজন। পরে আমরা আমাদের ফসল বাঁচাতে তাদের হাত থেকে আমাদের রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সর্বশেষ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়। কিন্তু তাতে আমাদের কোন সমাধান হয়নি। বরং অভিযোগ দেয়ায় আমাদের উপর ইজারাদারেরর লোকজন অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ১০ কেজি সার নিয়ে গেলেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আমরা এই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। শুধু কৃষক নয় খেয়া ঘাটে টোলের ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে সব শ্রেনীপেশার মানুষের।
শিহাব নামে সপ্তম শ্রেনীর এক ছাত্র বলেন, আমি এই খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করি। আমার নিকট ৯০ টাকায় নেয়। কম দিলে টাকা ফেলে দিয়ে নৌকা থেকে নামিয়ে দেয়। ঔষধ কোমন্পানীতে কর্মরত এক প্রতিনিধি বলেন, আমি অনেক উপজেলায় খেয়াঘাটে চলাচল করেছি। কিন্তু এখানকার মতো এত অরাজকতা কোথাও দেখিনি। সামান্য একটু নদী পার হতে নিজের মোটরসাইকেল মিলে গুনতে হয় ১৫০/৩০০ টাকা। সেই সঙ্গে ৫কেজির একটি কার্টুন থাকলে তারও ভাড়া দিতে হয়।
এলাকার কয়েকজন সচেতন নাগরিক জানান, টোলের নামে এই খেয়া ঘাটে ইজারাদারদের দৌরাত্ম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দ্রত বাড়তি টোল আদায় বন্ধ না করলে যে কোন সময় ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটতে পারে। এই বিষয়ে ইজারাদার রেজাউল ইসলামকে প্রতিবেদক ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহে গেলে সেখানে থাকা ইজারাদারের লোকজন চরম দাম্ভিকতার স্বরে বলেন, টাকা নিচ্ছি আরও নেব। যে যা পারে করুক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতারের নিকট এই বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।#