ফজলার রহমান, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাইবান্ধা ঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি মৌজায় অবস্থিত পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন স্বঘোষিত ঠিকাদার ও উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ হেলালুর রহমান হেলাল।
এলাকাবাসীর দাবি, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে ‘চাঁদা দাবি’ ও ‘সরকারি কাজে বাধাদান’-এর মতো মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তিকর নাটক সাজানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (PEDP-4) এর আওতায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টিতে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বিষয়টি নিয়ে বারবার প্রতিবাদ জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী হেলাল একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের প্রবল আপত্তির মুখে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর গত ২৩ জুলাই (সোমবার) দুপুরে গোপনে নির্মাণশ্রমিক এনে পুনরায় কাজ শুরু করা হয়। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হেলাল উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন যে, এলাকাবাসী ‘চাঁদা দাবি’ এবং ‘সরকারি কাজে বাধা’ দিয়েছেন। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের হস্তক্ষেপও কামনা করেন। হেলালের অভিযোগে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল ইয়াসা রহমান তাপাদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে—এলাকাবাসীর এই অভিযোগের যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে। এখানে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনাই ঘটেনি।” তিনি আরও জানান, ২ দিন পরে এক্সপার্ট ( expert) এসে সরেজমিনে তদন্ত করবে। এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, হেলালের অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জনমত বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী তহিদুল করিম সরকার স্বীকার করেন, “প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। রংপুর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে সরেজমিনে তদন্ত করবেন।” তবে অভিযুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ হেলালুর রহমান হেলাল সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্য না করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন, যা এলাকাবাসীর মধ্যে আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, “সরকারি অর্থে নির্মিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন যেন শিশুদের জন্য নিরাপদ ও টেকসই হয়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং দায়িত্বহীনতার কারণে আজ এই কাজটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।” তারা দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
একটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে এমন অনিয়ম ও মিথ্যা অভিযোগ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। তাই প্রশাসনের উচিত, নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই ধারাকে রুখে দেওয়া।#