# মেহেরুল ইসলাম মোহন, লালপুর, নাটোর………………………..
নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া থানা এলাকা থেকে নিজ ভ্যানে কখনো দূর্ঘটনায় মৃত্য, কখনো আত্মহত্যা, কখনো হত্যাকান্ডের মরদেহ, আবার কখনো কখনো নদী-জঙ্গলে পাওয়া অজ্ঞাত মরদেহ মর্গে আনা নেওয়া, এমনকি আদালতের নির্দেশক্রমে কবর থেকে দূর্গন্ধযুক্ত মরদেহ তুলে মর্গে আনা নেওয়া, আবার কখনো কখনো অর্ধগলিত মরদেহ ধুয়ে কবর দেওয়া কাজে লিপ্ত থাকা সেই হাশেম যেন আজ নিজেই জীবন্ত একটি লাশ,খবর রাখে না কেউ।
প্রায় ৮ মাস আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় হাশেম আলীর পা ভেঙে পঙ্গু হয়ে অসহায় অবস্থায় বিছানায় দিন কাটছে তার। রবিবার(৪ঠা সেপ্টেম্বর-২০২২)সকালে লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের কচুয়া কারিগর পাড়া গ্রামের মৃত আবু বক্কর প্রামানিকের ছেলে লাশ টানা সেই হাশেম আলীর বাড়িতে গিয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে লালপুর ও বাগাতিপাড়া থানার লাশ টানার কাজ করেছি। পঁচা-গলা পোকামাকড় যুক্ত অনেক লাশও কবর থেকে তুলতে হয়েছে,এমকি সেই পঁচা-গলা লাশের দুর্গন্ধের কারণে আত্মীয় স্বজনরা লাশের কাছে না আসার কারণে আমি নিজেই কোলে তুলে নিয়ে ভ্যান যোগে মর্গে নিয়ে গেছি এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তা আবার পুনরায় কবর দিয়েছি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে হাশেম আরও বলেন,গত ১৫ জানুযারি বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি বাজারে এক সড়ক দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত অবস্থায় আমি পড়ে থাকলেও ভয়ে কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। সবাই শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। পরে পুলিশের সহায়তা রাজশাহী হাসপাতালে আমার চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে আমাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পর পর দুইবার অপারেশনের খরচ জোগাতে ১৮ কাঠা জমি ও বাড়ির দু’টি গরুও বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তার শেষ সম্বল ৩ কাঠা সহ বসত বাড়ি। ১৮-২০দিন পর হাসেমের আরও একটি অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন ৬০০ -৭০০ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে।
সামনে অপারেশনের খরচ আর সংসার খরচের টাকা জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।পরিশেষে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,দুর্ঘটনার পর দুই থানা থেকে সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিল। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে কোনো ভ্যানে উঠে সাহায্য চাইতে ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে চাইলেও লাশ টানা লোক বলে ভয়ে ভ্যানচালকরা নেয় না।#