1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Rokon :
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:
ধর্মীয় স্থানে সাম্য: কেন এটি মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য? হেফাজতে থাকা আসামির বিতর্কিত বক্তব্যে ঝড়, আরএমপি কমিশনারকে তলব বিচারকের ছেলে হত্যা: দায়িত্বে অবহেলায় এসআইসহ ৪ পুলিশ প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাচোলে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলন বাঘা পৌর কৃষকদলের পরিচিতি সভা, উন্নয়নে কৃষকের পাশে থাকার অঙ্গিকার ভারতের দাদাগীরী আর দেখতে চাই বাংলার মানুষ:  চাঁপাইনবাবগঞ্জে মির্জা ফখরুল গঙ্গা-পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলবঃমির্জা ফখরুল আত্রাইয়ে অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক দুলুকে বর্ণাঢ্য বিদায় সংবর্ধনা সাতক্ষীরার আটুলিয়ায় ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ওলামা সম্মেলন আদর্শ মানুষ গড়ার চাবিকাঠি: ‘আপনা আচরি ধর্ম অন্যরে শেখাও’

ধর্মীয় স্থানে সাম্য: কেন এটি মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য?

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

৥  ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম ৥

ভূমিকা ধর্ম মানুষের জীবনে এক অপরিহার্য অংশ, যা মানবতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে নৈতিক ও আত্মিক দিক থেকে উন্নত করা এবং একতাবদ্ধ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, কিছু মানুষ ধর্মের মূল বার্তা থেকে সরে এসে ধর্মকে বিভেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ, প্রতিটি ধর্মের প্রধান কেন্দ্র—উপাসনালয়গুলো—সব মানুষের জন্য সাম্য ও শান্তির বার্তা বহন করে। এই নিবন্ধে, আমরা ধর্মীয় স্থানগুলোতে সাম্যের ধারণা কেন এত জরুরি, তা নিয়ে আলোচনা করব।

ধর্মীয় স্থানে সাম্যের ধারণা: কেন এটি এত জরুরি? এই লেখাটি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধর্মের মূল বার্তা—সাম্য ও সম্প্রীতির কথা তুলে ধরেছে। ধর্ম মানুষকে একত্রিত করে, বিভাজন নয়। আসুন, এই মূল বার্তাটি আমরা আরও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করি। ইসলামে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধারণা: কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে : ইসলাম ধর্মের একটি অন্যতম মূল ভিত্তি হলো সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব। মসজিদে প্রবেশ বা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শ্রেণিবৈষম্য নেই। ধনী-গরিব, উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত, সাদা-কালো—সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সামনে নত হয়। এটি ইসলামের এক অনন্য সৌন্দর্য।

এর একটি সুন্দর উপমা দেওয়া যায়: যেমনটা একটি মুক্তার মালা। প্রতিটি মুক্তা আলাদা হলেও সুতোয় গাঁথা হলে তারা একটি সুন্দর হার তৈরি করে। ঠিক তেমনি, ইসলামে সব মানুষ আলাদা জাতি ও গোত্রের হলেও তারা ‘উম্মাহ’ বা একটি একক সম্প্রদায় হিসেবে একত্রিত। মসজিদে যখন সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়, তখন কোনো পার্থক্য থাকে না, তখন সবাই এক।

পবিত্র কুরআনেও এই সাম্যের বার্তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: “হে মানবজাতি, আমরা তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী (খোদাভীরু)।” (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)

এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে বলে যে, মানুষের মর্যাদা তার বংশ, জাতি বা গোত্রের ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে তার তাকওয়া বা আল্লাহভীতির ওপর। এটি আমাদের শেখায়, একজন ফকিরের তাকওয়া একজন বাদশাহর তাকওয়ার চেয়ে বেশি মূল্যবান হতে পারে।

উপাসনালয়ে সাম্যের প্রয়োজনীয়তা: যখন ভেদাভেদ ভুলে এক স্রষ্টার সামনে নত হই এখানে অন্যান্য ধর্মেও সাম্যের ধারণা তুলে ধরা হয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুধর্মে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ (সারা বিশ্বই একটি পরিবার), বৌদ্ধধর্মে জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা এবং খ্রিস্টধর্মে সবার প্রতি ভালোবাসা ও সেবার শিক্ষা—এই সব কিছুই প্রমাণ করে যে, প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষা হলো সাম্য ও সম্প্রীতি। ধর্মীয় স্থানগুলো হলো সেই জায়গা, যেখানে মানুষের ভেদাভেদ ভুলে এক স্রষ্টার উপাসনা করা উচিত। এটি কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষমতার স্থান নয়, বরং আধ্যাত্মিক শান্তির আশ্রয়। উপাসনার জায়গাগুলোকে কলুষিত করা, সেখানে বিভেদ তৈরি করা, তা সেই ধর্মের মূল নীতি থেকে বিচ্যুত হওয়া।

একটি সুন্দর উপমা হলো, একটি নদী। নদীর জল যখন প্রবাহিত হয়, তখন সে তার উৎস ভুলে যায়। সে কেবল সামনের দিকে এগিয়ে চলে। তেমনি, উপাসনালয়ে গেলে আমাদের নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে এবং এক স্রষ্টার দিকে মন নিবিষ্ট করতে হবে।

আমাদের করণীয়: জীবনের প্রতিটি ধাপে সাম্য প্রতিষ্ঠা মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত ইসলামের এই সাম্যের বার্তাকে শুধুমাত্র মসজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও মেনে চলা। সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি সম্মান দেখানো এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।

এ বিষয়ে একটি গল্প বলা যায়: একবার এক দরিদ্র কাঠুরে তার ভারী বোঝা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন ধনী ব্যবসায়ী। কাঠুরে যখন মসজিদের দিকে যেতে চাইল, তখন ব্যবসায়ী তাকে নিয়ে উপহাস করে বললেন, “তুমি তো একজন সামান্য কাঠুরে, তোমার আবার নামাজ! তুমি কি জানো আমি কত বড় ব্যবসায়ী?” কাঠুরে কোনো উত্তর না দিয়ে কেবল হেসে বলল, “মালিকের দরবারে সব মানুষ সমান।” এরপর যখন তারা মসজিদে প্রবেশ করল, তখন ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। দু’জনেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করল। নামাজ শেষে ধনী ব্যবসায়ী উপলব্ধি করলেন, সত্যিই আল্লাহর সামনে তাদের উভয়ের মর্যাদা সমান। এই গল্প আমাদের শেখায়, বাইরের পরিচয়ের চেয়ে ভেতরের পরিচয়ই আসল।

আমাদের উচিত এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে ধর্মীয় স্থানগুলো সবসময় সকল মানুষের জন্য এক শান্তির আশ্রয় হয়ে থাকে। উপসংহার ধর্মীয় স্থানগুলো হলো আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা কেবল একটি ধর্মীয় আদর্শই নয়, বরং একটি মানবিক কর্তব্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো উপাসনালয় হলো মানবজাতির মিলনকেন্দ্র, যেখানে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, সাদা-কালো—সবাই এক হয়ে এক স্রষ্টার কাছে নত হয়। যখন আমরা ধর্মীয় স্থানে ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে উপাসনা করব, তখন সেই সাম্যের বার্তা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে। ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা রক্ষা এবং সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

আসুন, আমরা সেই সাম্যের আদর্শকে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করি এবং বিশ্বকে আরও সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ করে তুলি।#  লেখক একজন শিক্ষক কবি গবেষক ও প্রাবন্ধিক

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট