বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরে বেসরকারি মহানগর ক্লিনিকে আবারও ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ক্লিনিকে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে আয়াদের মাধ্যমে সিজারিয়ান করানোর অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় ক্লিনিক মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও মৃত্যুর তথ্য গোপনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। নিহত সুর্মিলা বেগম (১৮) তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের দেউল গ্রামের আক্তারুল ইসলামের মেয়ে।
জানা গেছে, গত ১২ জুলাই (শনিবার) সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে সুর্মিলাকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পাঠানোর পরামর্শ দেন। এ সময় একটি দালালচক্র মহানগর ক্লিনিকে নিয়ে যায় সুর্মিলাকে। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে ক্লিনিকে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক না থাকলেও সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় এবং সন্তান জন্ম দেয় সুর্মিলা। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে সেখানেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দ্রুত রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হলে ১৪ জুলাই (সোমবার) সকালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের বাবা আক্তারুল ইসলাম বলেন, “ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এখানে কোনো ডাক্তার ছিল না, আয়ারা অপারেশন করেছে। আমি এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃতের পরিবারকে চুপ রাখতে একটি প্রভাবশালী ইউপি সদস্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। এছাড়া ক্লিনিকে নিয়মিত একজন এমবিবিএস চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তেমনটি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর ক্লিনিকের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন জানান, “ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহানগর ক্লিনিকের লাইসেন্স এখনও নবায়ন করা হয়নি। অভিযোগের সত্যতা পেলে লাইসেন্স নবায়নের কোনো সুযোগ থাকবে না।” এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, মহানগর ক্লিনিক দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগে বিতর্কিত। প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।#