মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে বিশেষ করে তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় এই সাপের দেখা মিলছে—কখনো ধানক্ষেতে, কখনো বাড়ির উঠানে, আবার কখনো জনবহুল রাস্তায়। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে কৃষকরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তানোর উপজেলার ২নং বাধাইড় ইউপির ও মুন্ডুমালা পৌরসভার শিবরামপুর, সাইধারা, মারিয়া, জুকারপাড়া, ধামধুম, জুমারপাড়া, করিমপুর, হাসনাপাড়া, চোরখোর, সাতপুকুরিয়া, চাঁদলাই, তালুকপাড়া, আয়ড়া, তেলোপাড়া ও মুন্ডুমালা এলাকাগুলোতে রাসেল ভাইপারের উপদ্রব প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক এক মর্মান্তিক ঘটনায় ২ জুলাই মাঠে কাজ করার সময় শিবরামপুর গ্রামের ইসমাইল (৩৮), পিতা মৃত আলম, সাপের কামড়ে নিহত হন। রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর আরও একজন একইভাবে রাসেল ভাইপারের কামড়ের শিকার হন।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, প্রায় প্রতিদিনই কৃষকরা দুই-একটি সাপ মেরে ফেলতে সক্ষম হচ্ছেন, কিন্তু তাতেও আতঙ্ক কমছে না। গত দুইদিন আগে কৃষক সুজনের জমিতে একটি রাসেল ভাইপার ও একটি গোহমা সাপ মারা পড়েছে। সেখানে একটুর জন্য পাওয়ার টিলার চালক খালেক দংশনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আবার গত পাঁচ দিন আগে সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম মুন এর জমিতে শ্রমিকরা কাজ করার সময় দুইটি রাসেল ভাইপার দেখতে পেয়ে মেরে ফেলেছে। প্রতিষেধক নেই অধিকাংশ কেন্দ্রে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তানোর উপজেলার বিভিন্ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বেসরকারি ক্লিনিকে এই বিষাক্ত সাপের কামড়ের প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনাম নেই। ফলে দ্রুত চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ।
এ বিষয়ে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টি, এইচ, ও) ডা. বার্নাবাস হাসদাক বলেন, “তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে অ্যান্টিভেনাম মজুদ রয়েছে। তবে আমি আপনার মাধ্যমে (সাংবাদিক )সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, কেউ সাপে কাটলে যেন ওঝা বা তান্ত্রিকের কাছে না গিয়ে সরাসরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে আসে। দ্রুত চিকিৎসা পেলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।”
প্রশাসনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি এ বিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান এর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জনগণের প্রাণের দাবি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, “এটা কোনো ছোটখাটো বিষয় নয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে রাসেল ভাইপারের বিস্তার এখন যেন মহামারি রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের জীবন হুমকির মুখে। প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়েছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে হারাতে হবে।”
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর একটাই আবেদন—এই সমস্যাকে অবহেলা না করে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। শুধু একটি প্রতিষেধক না থাকার কারণে যেন আর কোনো প্রাণ ঝরে না পড়ে—এটাই এখন সময়ের দাবি।#