চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি………………………………………………
ভুয়া এনজিও থেকে কোটিপতি তাইজুল, গ্রাহকের টাকায় সম্পদের পাহাড়,বাড়ি শোরুমের আলিশান কারবার ঘুরছে পাওনাদার একসময় ছিলেন গ্রামীন ব্যাংকের মাঠকর্মী। পরে চাকুরি ছেড়ে নিজেই খুলে বসেন নিবন্ধনহীন অবৈধ ভুয়া এনজিও। সেখানে জনগণের জমানো লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে হয়েছেন কোটিপতি। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। টাইলসের শো-রুম করার পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে পাঁচতলা ভবনের মালিক রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আমতলীপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে তাইজুল ইসলাম। অনুসন্ধানে ভুয়া এনজিও মালিক তাইজুলের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে, নানারকম চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, গোদাগাড়ীর আমতলীপাড়ায় জন্ম হলেও গ্রামীণ ব্যাংকের চাকুরি ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভুয়া এনজিও নীড় মহিলা সংস্থা। এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানের চারটি শাখা রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। সেখান থেকে জনগণের জমানো টাকা সংগ্রহ করার পর আত্মসাৎ করে নিজের আখের গুছিয়েছে তাইজুল ইসলাম।
ঐভুয়া এনজিওর গ্রাহক,মাঠকর্মী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৪ বছর আগে যাত্রা শুরু করে নীড় মহিলা সংস্থা নামের এই অবৈধ এনজিওটি। আগে জেলা শহরের রাজমহল সিনেমা হলের পেছনে অফিস থাকলেও বর্তমানে শাহিবাগে পরিচালক তাইজুল ইসলামের নিজ বাড়ি থেকে চলে এর সকল কার্যক্রম। শাহিবাগে প্রধান কার্যালয় ছাড়াও এর শাখা রয়েছে ইসলামপুর ইউনিয়নের হায়াতমোড়, দেবিনগর ও চরবাগডাঙ্গায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি করে দেয়ার নামে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চাকপাড়া গ্রামের মৃত শেকান্দার আলীর ছেলে নুরুল ইসলামের কাছে থেকে। পরে তার টাকা আত্মসাৎ করে পদ না দেয়ায় থানায় অভিযোগ দেন নুরুল ইসলাম।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম জানান, আমাকে এনজিওর নামে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে তা আত্মসাৎ করে। এনিয়ে নানারকম টালবাহানা করতে থাকলে আমি থানার আশ্রয় নেয়। পরে থানায় বসে আমার টাকা ফেরতের জন্য শালিস হয়। সেখানে ১১ লাখ টাকা দিলেও বাকি ১০ লাখ টাকা ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও দিব দিচ্ছি করে নানরকম টালবাহানা করছে। বারবার ঘুরেও টাকা পাচ্ছি না ।
ইসলামপুর ইউনিয়নের হায়াতমোড় গ্রামের ভুক্তভোগী এক কৃষক জানান, দুই ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের জন্য জমানো টাকা রেখেছিলাম নীড় মহিলা সংস্থায়। নেয়ার সময় বলেছিলেন, যখন চাইবেন তখনই ফেরত দেয়া হবে। অথচ আমাদের শতকষ্টে জমানো প্রায় ১ লাখ টাকা গত কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও দেয়নি।
দিনমজুর এক ভুক্তভোগী বলেন, চরবাগডাঙ্গা শাখা থেকে জনগণের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে তাইজুল ইসলাম। কিন্তু বারবার ঘুরেও জনগণের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। শুনেছি এসব টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাইজুল। আমরা তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জনগণের টাকাগুলো ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি করছি।
অনুসন্ধানে একাধিক গ্রাহকের সাথে কোটি কোটি প্রতারণার সত্যতা পাওয়া যায় তাইজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আরও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তাইজুল ইসলামের স্ত্রীও এই এনজিও প্রতারণার অন্যতম মূলহোতা। তার নির্দেশে চলত ভুয়া এনজিওর নানারকম কার্যক্রম।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক শিক্ষাবিদ বলেন, শুধু তাইজুল ইসলাম নয়, তার মতো অনেক প্রতারক জনগণের সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাক হাতিয়ে নিচ্ছে। যার কারণে পথে বসতে হচ্ছে অসহায় সাধারণ মানুষকে। তাই প্রশাসনের নিকট দাবি, ঔ সব লোকের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। এতে শত শত সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে। উন্নয়ন বাড়বে দেশের।
জানা যায়,শালিশে চারটি শাখায় গ্রাহকের প্রায় দেড় কোটি টাকা থাকার কথা স্বীকার করেন তাইজুল ইসলাম। তবে মাঠকর্মীরা বলছেন, এর পরিমাণ আরও কয়েকগুন বেশি হতে পারে। এনজিওতে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম চালাতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও তার কিছুই নেই তাইজুল ইসলামের নীড় মহিলা সংস্থায়। এবিষয়ে নীড় মহিলা সংস্থার পরিচালক তাইজুল ইসলাম তার ভুয়া এনজিওর কোনধরণের নিবন্ধন নেই বলে জানান। তিনি বলেন, এখন কার্যক্রম কিছুটা গতিহীন। নিজের কিছু লোকজন ৬-৭ লাখ টাকা আমানতের ফেরত পাবে। সেগুলো পরিশোধ করা হবে। তবে নুরুল ইসলামের টাকা ফেরত দেয়া ও সভাপতি করে দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।#