বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘায় কুপিয়ে হত্যার পর বাড়ির পাশের আমবাগানে ফেলে রাখা হয় সাদেক হোসেন (৫০)’র মরদেহ। মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার আরিফপুর গ্রামের আম থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।পরে মরদেহ মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত সাদেক হোসেন উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের আরিফপুর গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে।
পুলিশ জানায়, নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পেটে ছুরিকাঘাতে নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে গেছে। ঘটনার পর কামাল হোসেন আত্নগোপনে চলে গেছে। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া গেছে। হত্যার সন্দেহ নিহতের সৎ ভাই কামাল হোসেনের দিকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কামাল হোসেনের স্ত্রী চায়না ও তার ছেলে চন্দনসহ সাদেকের বোন সফেলাকে থানায় নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদেক হোসেনের পিতা মারা যাওয়ার পর তার মা নতিফন দুখু প্রামানিকের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কামাল হোসেন দ্বিতীয় পক্ষের দুখু প্রামানিকের ছেলে। সাদেক হোসেন গরু ও ছাগলের ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। কামাল হোসেন চুয়ানি (বাংলা মদ) তৈরি করে এলাকায় বিক্রি করে। তার নামে মাদক,হত্যা,ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। দুই ভাই-ই মাদকে আসক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান,ঘটনার কয়েকদিন আগে সাদেক হোসেন মাতাল অবস্থায় চন্ডিপুর বাজার এলাকায় তার সৎ ভাই কামালকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এ খবরটি জানার পর সাদেকের প্রতি রাগান্বিত ছিল কামাল। ঘটনার দিন রাতে আরিফপুর মোড়ে ছিলেন সাদেক ও কামাল। তাদের মুখের গন্ধে নেশাগ্রস্ত মনে হয়েছে।
নিহত সাদেকের দ্বিতীয় স্ত্রী নাদিরা বেগম ও বড় মেয়ে সাথী আক্তার জানান, প্রথম পক্ষের স্ত্রী আরিফপুর গ্রামের আশেমা বেগম মানসিক প্রতিবন্ধী। তার পক্ষের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে থাকেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর একই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে ঘর জামাই থাকেন সাদেক। জমির ফসল দেখার জন্য আরিফপুর গ্রামে যাওয়া আসা করতেন। পুর্ব শত্রুতার জেরে তার সৎ ভাই কামাল হোসেনই সাদেক হোসেনকে হত্যা করে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাকে আটক করলেই হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি তাদের।
বুধবার(১৪-০৫-২০২৫) সরেজমিন আরিফপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাদেক হোসেনের নিজ বাড়িতে কেউ থাকে না। বাড়ির ৫০ মিটার পশ্চিমে মকবুলের আম বাগানে তার মরদেহ পড়ে ছিল। বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার খন্দকার আলালউদ্দিন জানান, বাঘা থেকে আরিফপুর মোড়ে যাওয়ার পর সড়কের দক্ষিনে সাদেকের বাড়ির পাশের আম বাগানের ভিতর লাইট বা মোবাইলের আলো দেখে কয়েকজন মিলে সেখানে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সাদেকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। তাৎক্ষণিক বাঘা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.ফ.ম আছাদুজ্জামান বুধবার (১৪ মে) দুপুর সোয়া ২টায় জানান, সকালে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘটনের জন্য ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের চিহৃ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে হত্যা মামলা হবে বলে জানান ওসি।#