# জিয়া রাজ…………………………………………………………………….
“কারো সাথে বৈরিতা নয়,সবার সাথে বন্ধুত্ব” এই মূল মন্ত্রকে সামনে রেখে গত কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে শেখ হাসিনার সরকার। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে দেখছি হঠাৎ আমেরিকা বাংলাদেশ নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে, নানা বিবৃতি দিচ্ছে। হঠাৎ আমেরিকার এত উৎসাহ কেন? তারা কি গণতন্ত্র চায়? না সেন্ট মার্টিন চায়?’ চলুন একটু আমেরিকার অতীত মনে করে দেখি। আমেরিকার অতীত ইতিহাস বলছে বিশ্বের যতগুলো দেশে আমেরিকা গনতন্ত্র রক্ষার কথা বলে নাক গলিয়েছে তার সব কটি রাষ্ট্র ধ্বংস হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করে দেয়ার কথা বলে সেই দেশে প্রবেশ করে। তারপর দেশটাকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। তার পেছনে অনেক গুলো কারণ থাকে। যে দেশে আমেরিকা গনতন্ত্র রক্ষার কথা বলে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু দুষ্টু চক্র বা দল থাকে। তাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা দেড় দশক ধরে ক্ষমতায়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সেটা প্রধান মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন প্রায় বাস্তুহারা দলে পরিনত হতে চলেছে। বহু জ্বালাও পোড়াও, হরতাল, অবরোধ করেও সরকার কে ফেলতে না পেরে শেষ চেষ্টা হিসাবে আমেরিকাকে ব্যবহার করছে বিএনপি। আমেরিকাকে অনেক অনুরোধ করে বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য রাজি করে বিএনপি ও জামায়ত নামক রাজনৈতিক দলদুটি। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ড. ইউনুস। এবার আসি কেন আমেরিকা বাংলাদেশের অভ্যন্তে হস্তক্ষেপ করছে।
আমেরিকা বলছে বাংলাদেশে গনতন্ত্র রক্ষা করে উনারা সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু একটা নির্বাচন চায়। এখন এখন প্রশ্ন হলো সকল দল না বলে উনারা যদি সরাসরি বলতেন বিএনপি কে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে শেখ হাসিনা কে তাহলে মনে হয় বাংলাদেশের জনগণ আমেরিকার ভাষাটা স্পষ্ট বুঝতে পারতো। কারণ আমরা বাঙালিরা ইংলিশ কম বুঝি। আমেরিকা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলে। কিন্তু আমেরিকার অভ্যন্তরে বিশ্বের বড় বড় মানবাধিকার লংঘিত হয় সেটা তারা চোখে দেখে না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ২১ বারেরও বেশি বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও আজ পর্যন্ত কোন হত্যা চেষ্টাকারিকে প্রকাশ্যে বিনা বিচারে গুলি করে মারা হয়নি। কিন্তু অমেরিকাতে বাইডেন কে অনলাইনে হত্যার হুমকি দাতাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গুলি করে মারা হয়েছে, কোথায় থাকে তখন মানবাধিকার?
মিয়ানমারের দুটি ব্যাংক মিয়ানমার ফরেন ট্রেড ব্যাংক ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট এন্ড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মিয়ানমারের এই ব্যাংক দুটিতে সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রাখা হয়েছে। আমেরিকা যদি বাংলাদেশের ভালোই চায় তাহলে মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পূর্বে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংককে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বললো না কেন? নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর বাংলাদেশকে মিয়ানমারে থাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক এখন আর সেই টাকা তুলতে পারছেন না নিষেধাজ্ঞার কারণে। আমেরিকা সব সময়ই চায় ভারত তাদের সাথে থাকুক। ভারতকে সাথে রাখতে পারলে এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রকে বাগে আনা আমেরিকার পক্ষে সহজ হবে। সেই জন্য ভারত কে সাথে রাখতে হলে ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশকেও লাগবে।
বাংলাদেশ এখন ভৌগলিকভাবে অনেক সম্ভবনার একটা দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অন্যতম একটা সুখি সমৃদ্ধ দেশ হতে যাচ্ছে। চীন, রাশিয়া, ভারত সহ অনেক দেশের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সু-সম্পর্ক গড়ে উঠছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে উন্নতি হতে থাকলে আমেরিকার মুড়লগীরি আর থাকবে না ভেবে দেশের অভ্যন্তরের কিছু আমেরিকার লবিষ্ট, দালালের সহযোগিতায় আমেরিকা হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমেরিকা চাচ্ছে বাংলাদেশে একটা পুতুল সরকার গঠন করে দিতে। সেই পুতুল সরকার চলবে আমেরিকার কথা মত। তখন আমেরিকার স্বার্থ পূরণ হবে। বঙ্গোপসাগরে বসাবে আমেরিকার নৌঘাটি। সেন্টমার্টিন দ্বিপ থেকে আমেরিকা নিয়ন্ত্রণ করবে পুরো এশিয়া। চীন সহ বিভিন্ন দেশে হামলা চালাতে সহজ হবে আমেরিকার।
বাংলাদেশ মানবিক দিক বিবেচনা করে মিয়ানমারের নির্যাতিত লাখ লাখ রহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের সীমিত সম্পদ থাকা সত্বেও শেখ হাসিনা রহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। বিশ্ব মড়লগীরি করা আমেরিকা সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিৎ ছিল এই রহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা। এখানে আমাদের প্রশ্ন আমেরিকা যদি বাংলাদেশের ভালোই চাইবে তাহলে কেন এত বছর পরেও একটা রহিঙ্গা মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করলো না। উল্টো আমেরিকা বলছে রহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠিয়ে বাংলাদেশই রেখে দিন। আমেরিকার একটা সাংবাদিক কে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ড. ইউনুস সাহেবও একই সুরে বলেছেন রহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানোর সময় হয়নি।
আমরা একটা জায়গায় অনেক দূর্বল, সেটা হলো বাংলাদেশে আমেরিকার নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশের দুটি বড় বড় পত্রিকা চলে অমেরিকার টাকায়। তাদের ধারের কাছেও কেউ যেতে পারে না। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ চলে আমেরিকার টাকায়। বহু সংখ্যক লোক আছে যারা আমেরিকার টাকায় ভ্রমণ, বেতন-ভাতা সহ অনেক কিছুর খরচ পায়। আমেরিকা প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন সাহায্য দেয় আমেরিকার মানুষকে। বাংলাদেশ সরকার ইচ্ছা করলেই এই নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পারবে না। তাই আমাদের সরকারের উচিৎ দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমেরিকার নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে আমেরিকা নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এবং কোন কোন ব্যক্তি আমেরিকার টাকায় চলে, তাদের একটা তালিকা করে তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে আমেরিকা সেখানে সামনে আসে সেখানে খেলা শুরু হয়ে যায়। তারা পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা তৈরী করে রাখে কোথায় কিভাবে এগিয়ে যাবে।
আমাদের দেশের নির্বাচন কিভাবে হবে, গনতন্ত্র কিভাবে রক্ষা হবে সেটা দেশের প্রত্যেকটি দলকে বসেই ঠিক করতে হবে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বাহিরের দেশের হস্তক্ষেপ আশা করা মোটেও সুখোদয় হবে না। রবং সেটা হবে খাল খেটে কুমির আনার সমতুল্য। বিএনপি এখন ক্ষমতার মোহে উন্মাদ হয়ে আমেরিকার হস্তক্ষেপ চাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কি ভেবে দেখেছে আমেরিকাকে দেশে আনার পরিণতি কি ভয়াবহ হতে পারে। আমেরিকার সহযোগীতায় ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও কি শান্তি সুখে রাষ্ট্র চালাতে পারবে? বিএনপির উচিৎ হবে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা ভেবে জাতীয় স্বার্থে কাজ করে যাওয়া। আগে নিজে না বেঁচে আগে দেশকে বাঁচান। দেশ বাঁচলে আপনিও বাচবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা বাংলাদেশের জনগণ আমেরিকার গোলাম হয়ে থাকতে রাজি না। আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়।#