ছবি: আলআমিন
# মোঃ আল-আমিন হোসেন………………………………..
রাজশাহীতে আমের চেয়ে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছ থেকে ঝরেছে মুকুল, গুটি ও অপরিপক্ক আম। অন্যদিকে লিচুর মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ায় এবছর রাজশাহীতে লিচুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। এ কারণে রাজশাহীর হাটে-বাজারে আমের বদলে রঙিন ও রসালো লিচুর ফলন দেখা গেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ রাজশাহীর, কোর্ট বাজার, লক্ষীপুর, সাহেব বাজার, শালবাগান, খড়খড়ি, কোর্ট স্টেশন ও বাস টার্মিনালের ফল বাজারসহ অন্যান্য হাট-বাজার সরেজমিনে পরিদর্শন করে এমনটাই দেখা গেছে।
হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম দিকে রাজশাহীতে বাজারে ওঠে আঠি জাতের লিচু। এসব আঠি জাতের লিচু আকারে ছোট, তুলনামূলক কম মাংসল ও বিচির আকার বড় হয়ে থাকে। স্বাদের দিক থেকে কিছুটা টক-মিষ্টি। মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসায় দামও ছিল বেশ চড়া। মৌসুমের প্রথমে এসব লিচু বাজারভেদে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে ধীরে ধীরে দাম কমে বিক্রি হতে থাকে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পযর্ন্ত।
তবে আঠি লিচু শেষ হতে না হতেই বাজারে আশা শুরু করে বোম্বে জাতের সুস্বাদু লিচু। এই লিচুর আকার বেশ বড় এবং এ জাতের লিচুর বিচিও ছোট হয়ে থাকে। যার কারণে মাংসল অংশটিও অনেক বেশি। সপ্তাহজুড়ে বাজার ঘুরে দেখা গেছে দামের বেশি। রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট বাজার, লক্ষীপুর ও সাহেব বাজারে বোম্বের লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে ২২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। তবে খড়খড়ি ও শালবাগান এলাকায় ২০০ থেকে ২২০ টাকা তুলনামূলক কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে নগরীর বাস স্টেশন, টার্মিনালের ফলের দোকান ও রাস্তার পাশে বড় ঢালা ও ভ্যানে বিক্রি হওয়া লিচুর দাম অন্যান্য স্থানের চেয়ে একটু বেশি দেখা গেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গমনকারী যাত্রীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে এসব লিচু। একারণে বিক্রেতারা হাঁকছেন বেশী দাম। একশ’ লিচু তারা বিক্রি করছেন ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে বিক্রেতাদের দাবি, তাদের লিচু অন্যান্য জায়গার লিচুর চেয়ে রাজশাহীর লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু। তাছাড়া গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাড়তি থাকায় লিচুর দাম কিছু বেশি রাখতে হচ্ছে। শুধু রাজশাহীর বাজার নয়, বিভিন্ন পাড়া মহল্লাতেও ভ্যানে করে লিচু সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে লিচু। পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হওয়া লিচুর আকার তুলনামূলক ছোট। মৌসুমী লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল রহমান । লিচু বিক্রি নিয়ে বেশ ব্যস্ত তিনি।
রাজশাহী রাজধানী লক্ষীপুর মোড়ে ঠাকিতে করে হাজার পাঁচেক লিচু নিয়ে বসেছেন বিত্রুতা।তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিকে ৩০০ টাকায় লিচু বিক্রি করেছি। বর্তমানে বিত্রুি ২৫০ টাকাস। চাহিদার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাহিদা খুব ভালো। আমের কথা মানুষ মুখেই নিচ্ছে না।
এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় মোট ৫২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৪৪ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৬ মেট্রিক টন। লিচুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। আমের মুকুলের জন্য এবছর আবহাওয়া ভালো না থাকলেও লিচুর জন্য এই মৌসুম ছিল বেশ অনুকূলে। যার কারণে এ মৌসুমে পরিমাণে রাজশাহীতে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।#