জিয়া রাজ…………………………………..
একজন সংগ্রামী নারী নাম জয়া খাতুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জোহা চত্ত্বরে চা বিক্রি করেন। এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে সংসার তার। স্বামী রিকশা চালায়। ছেলে রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স শেষ করেছেন। স্বামী রিকশা চালিয়ে যা দু’ পয়সা আয় রোজগার করেন তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হয়।
তিনি তাঁর তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে মেধাবী তাই জয়া খাতুনের ইচ্ছা তাকে পড়াশোনা শেখাবেন। মেয়ের জামাই পড়াশোনা করাবে না কিন্তু মায়ের ইচ্ছে পড়াশোনা করাবেন। তাই সে নিজেই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন এখন। করোনার সময় স্বামীর আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়।
জয়া খাতুন কোন উপায় না পেয়ে রাজশাহী শহরের বাড়ি বাড়ি কাজ খুঁজতে বের হোন। কিন্তু কোথাও কোন কাজ পাননি। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়লো রাস্তায় এক মেয়ে চা বিক্রি করছেন। সেটা দেখে জয়া খাতুন মনে মনে অনুপ্রাণীত হয়ে স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চা বিক্রি করতে শুরু করেন। কিন্তু আশানুরূপ কাস্টমারের সাড়া না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জয়া খাতুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে বসে কান্না করেছেন। কি করবেন, কি ভাবে সংসার চালাবেন, ছেলে মেয়ের মুখে কিভাবে খাবার তুলে দেবেন সেই হতাশা তাকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’ জন প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীর নজরে আসলে তাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে জয়া খাতুন ঘুরে দাড়াতে থাকেন।
জয়ার চা বিক্রি বেড়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী থেকে শহীদ মিনারে, শহীদ মিনার থেকে জোহা চত্ত্বরে এসে সন্ধ্যাবেলা ফ্লাসে করে চা বিক্রি করতে থাকেন। কিন্তু জোহা চত্ত্বরে শিক্ষক ও নিরাপত্তা প্রহরীর বাধার সম্মুখীন হোন। জোহা চত্ত্বরে বসে তাকে চা বিক্রি করতে নিষেধ করা হতো। বিষয়টা জানতে পেরে এক ছাত্র জয়া খাতুনের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। জয়া খাতুনের হাতের চা খেতে সবাইকে আহ্বান করলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র শিক্ষকরা মিলে চা বিক্রেতা জয়া খাতুন পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জোহা চত্ত্বরে বসে চা বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হয়। এখন তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যা সাত টা থেকে জোহা চত্ত্বরে বসে চা বিক্রি করেন।
জয়া খাতুন বলেন এই চা বিক্রি করে আমার সংসার চলে না। চা বিক্রি করে আমার যা আয় হয় তা দিয়ে আমার মেয়েকে পড়াশোনার খরচ দেয় আর আমার ঔষধ কিনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার ও ছাত্ররা মিলে আমাকে কিছু সহযোগিতা করেন। এখন আস্তে আস্তে আমার চা বিক্রি বেড়েছে।#