বিশেষ প্রতিনিধি……………………………………………………………………..
সব বাধা পেরিয়ে এবার এইচএসসিতেও সফলতা অর্জন করেছে দরিদ্র পরিবারের তিন ভাই বোন । এর মধ্যে যমজ দুই ভাই পেয়েছে জিপিএ-৫। তাদের ১ বছরের বড় বোন শারিরিক প্রতিবন্ধী উম্মে কুলসুম সিনথিয়া পেয়েছে-৪.৮৩।
গত রোববার প্রকাশিত ফলাফলে তাদের সাফল্যর কথা জানা গেছে। যমজ দুই ভাইয়ের একজন গোলাম রাব্বানী রাজন (বড়) অপর ভাই গোলাম সাকলায়েন সাজন(ছোট)রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। মনিগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল উম্মে কুলসুম সিনথিয়া। আর্থিক অসচ্ছলতায়, তাদের পড়া লেখা নিয়ে শঙ্কিত মা-বাবা। তবে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই ভাই-বোন।
এসএসসি, অষ্টম শ্রেণীতে গোল্ডেন এ প্লাস ও পঞ্চম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল যমজ দুই ভাই। এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় ফিস কালচার এন্ড ব্রিডিং বিভাগে ৪.৭৯ পেয়েছিল উম্মে কুলসুম সিনথিয়া। তাদের বাড়ি বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম নতুন পাড়া। দুই রুম বিশিষ্ট আধা পাঁকা টিন সেট ঘর। এক রুমে থাকে ভাই-বোন, আরেক রুমে মা-বাবা।
জানা যায়,পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর থেকেই যমজ দুই ভাই বাড়িতে টিউশনি করে নিজের ও তার বোনের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছে। কেউ দশ টাকা হাতে ধরিয়ে দিলে তার খরচ না করে জমা করে রাখতেন কলম কিংবা লেখা পড়ার কাজে খরচের জন্য। সংসারে উপার্জনক্ষম বাবা আব্দুস সামাদ, দুইবার ষ্টোক করে অসুস্থ হওয়ার পরে নিজের আগ্রহ, নানা (মায়ের বাবা) মামার সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছেন তিন ভাই বোন।
তাদের মামা ফার্নিচার ব্যবসায়ী হুমায়ন কবীর জানান, পাঁচ সদস্যর সংসার চলতো দিনমজুর বাবার উপার্জনের টাকা দিয়ে। দুইবার ষ্টোক করে তাদের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। সংসার চালানোর জন্য পার টাইম আমার ফার্নিচারের দোকানেও কাজ করতো যমজ দুই ভাই। সুযোগ বুঝে টিউশনি করেও লেখা পড়া খরচ যুগাতো তারা। বাড়তি প্রয়োজনে আমি ও আমার বাবা আবু রায়হান (গোলাম রাব্বানী রাজন ও গোলাম সাকলায়েন সাজনের নানা) দেখভাল করি। এসএসসি পাশের পর তাদের ভর্তি নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়ি।
বাঘা থানার তৎকালিন পরিদর্শক(ওসি) সাজ্জাদ হোসেনের সহয়োগিতায় পুলিশের সংগঠন থেকে ৬০(ষাট) হাজার টাকা পেয়েছিলেন। গোলাম রাব্বানী রাজন ও গোলাম সাকলায়েন সাজন জানান, অভাবের বাঁধ ভেঙ্গে সাফল্যের চ্যালেঞ্জ এখন সামনের দিকে। যদি কোন বাঁধা না আসে, তাহলে প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। শিক্ষক হতে চান উম্মে কুলসুম সিনথিয়া। ছেলে-মেয়ের ভালো ফলাফলেও দীর্ঘশ্বাস গৃহিনী মা রুনা লাইলার।
তিনি জানান, বহুবার খেয়ে না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। কোন কোন দিন সকালে নাস্তা করার মতো খাবার ঘরে থাকেনি। দুর্ভোগের মধ্যেও পড়াশোনা থেকে পিছপা হয়নি তারা। কষ্টের এসব কথা জানিয়ে মা রুনা লাইলা বলেন, বাড়ি ভিটার ৭/৮ কাঠা জমি ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নেই। পড়া লেখার জন্য বাড়তি কোন টাকা দিতে পারেনি তার বাবা। তারা নিজেই টিউশনি করে আর মামার ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে পড়া লখার খরচ যুগিয়েছে। বড় মেয়ে উম্মে কুলসুম সিনথিয়াকেও আমার সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করতে হয়েছে । আর্থিক অনটন, দারিদ্র্যের দৈন্যতা পেছনে ফেলে ওরা এগিয়ে গেছে সামনের দিকে।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিঞা বলেন, ভালো ফলাফলে শুধু মা-বাবারই নয়, এলাকার মুখও উজ্জল করেছে। তবে প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলেও মেধাকে কাজে লাগাতে অর্থের প্রয়োজন পড়ে। মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, মানবেতর জীবন যাপনের মধ্যেও ভালো ফলাফল করা অন্যন্য সফলতা। তাদের জন্য আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে সহযোগিতা করছি । তবে আগামীতে পড়া লেখার জন্য বিত্তবানদের সহয়োগিতা তাদের অনেক কাজে আসবে। #