বিশেষ প্রতিনিধি………………………………………………………………………
বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা প্রাপ্তির ঐতিহাসিক দিন ১৬ ডিসেম্বর । মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। ৫৩তম মহান বিজয় দিবস। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এদিনটিতেই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
উৎসবের সমারোহে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে। বাঘা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহিত কর্মসুচির মধ্যে- উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনি করে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা করা হয়।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৬টায় উপজেলা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে আ’লীগ দলীয় নের্তৃবৃন্দ,উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, বাঘা থানা পুলিশ,উপজেলা আওয়ামীলীগ, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বাঘা ও আড়ানী পৌরসভা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,পৌর আওয়ামীলীগ, বাঘা প্রেস ক্লাব, রাজনৈতিকদল ও সহযোগী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সামাজিক সংগঠন,নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ এর বাঘা জোনাল অফিস, সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসসহ পেশাজীবি সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী দলসহ সর্বস্তরের জনগণও শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে। দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। হাসপাতাল, শিশু সদন, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু। সকাল ৯টায়, পুলিশ আনসার -ভিডিপি ও রোভার স্কাউটস, কাব, গার্লস গাইড, বিভিন্ন ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শন করা হয়। অভিবাদন গ্রহণ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু, আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতি, উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম। শারীরিক কসরত প্রদর্শনে অংশগ্রহন করেন, উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরুস্কার বিতরন করা হয়।
সকাল ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহি অফিসার ,অফিসার ইনচার্জ (ওসি), সহকারি কমিশনার (ভ’মি) জুয়েল আহমেদ,বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী,আড়ানি পৌর মেয়র মুক্তার আলী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ দলীয় নের্তৃবৃন্দ, অধ্যক্ষ নছিম উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনজারুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম,ডিএম বাবুল মনোয়ার,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন, বিএনএমের উপজেলা কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আশাদুজ্জামান,উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান,ওসি (তদন্ত) সবুজ রানা,উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিসার মিলন কুমার দাস সহ উপজেলা পরিষদের দপ্তর প্রধান, বীর মুক্তি যোদ্ধা আজিজুল আলম,সোলায়মান হোসেনসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান প্রমুখ।
বিকেল ৪টায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, বিকেল ৫টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ দলের উপজেলা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দলীয় নের্তৃবৃন্দ। শাহদৌলা সরকারি কলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন,সকাল ৮টায় কলেজ চত্বর শহীদ মিনারে ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে। পরে জাতির শান্তি অগ্রগতি কামনা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া মাহফিল ও খেলাধূলা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবুবকর সিদ্দিকসহ শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন হানাদার সেনা। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারের উপস্থিতিতে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানের পক্ষে লে. জেনারেল নিয়াজি এবং মিত্র বাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তেই বিশ্ববাসীকে অবাক করে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং মানচিত্র। রক্তাক্ত পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি।#