1. admin@sobujnagar.com : admin :
  2. sobujnoger@gmail.com : Rokon :
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ:
বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী  মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: রাষ্ট্রপতি স্বাচিপ রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর  ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান ভারত বাংলাদেশ চুক্তির বাস্তবতা নেই : মরণফাঁদ ফারাক্কার কারণে রাজশাহীর পদ্মা এখন মরুভুমি শিবগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নয়ন খানএর গণসংযোগ বাঘায় ফেন্সিডিল সহ মাদক ব্যবসায়ী মনিরুল গ্রেপ্তার রামপাল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে গাঁজাসহ- দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার রাজশাহীর বাগমারায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এগিয়ে আছে সান্টু

আমকাহনঃ ক্ষীরশা-ক্ষুদিক্ষীরশা-বোম্বাই ক্ষীরশা

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২
  • ১১২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

# অর্বাচীন……………………………………………

 

চাঁপাই নবাবগঞ্জের “ক্ষীরশাপাত” আম বাংলাদেশের তৃতীয় ভৌগোলিক নির্দেশক বা জি.আই পণ্য। জি.আই স্বীকৃতির মাধ্যমে আমটি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃত।

 

ক্ষীরশাপাত আমের ইতিহাসটা প্রায় ২০০ বছর আগের। ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে গড়ে তোলেন একটি আমবাগান। সেই বাগানেই অন্যান্য উৎকৃষ্ট জাতের আমের সঙ্গে চাষ হতো ক্ষীরশাপাত আম। বর্তমানে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু এই জাতটি। বর্তমানে বাংলাদেশের উৎপাদিত আমের ৩০ শতাংশই ক্ষীরশাপাত আম।

 

চাঁপাই নবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাত আম উৎকৃষ্ট জাতসমূহের মধ্যে একটি মধ্যম মৌসুমি এবং খুবই জনপ্রিয় বাণিজ্যিক জাত। ফল মাঝারি আকারের এবং অনেকটা ডিম্বাকৃতির। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ ফল গড়ে লম্বায় ৮.৬ সেমি., পাশে ৭.৫ সেমি., উচ্চতায় ৬.০ সেমি. এবং গড়ে ওজন ২৬৩.৯ গ্রাম হয়। পাকা ফলের ত্বকের রঙ সামান্য হলদে এবং শাঁসের রঙ হলুদাভ। শাঁস আঁশবিহীন, রসাল, গন্ধ আকর্ষণীয় ও বেশ মিষ্টি। গড় মিষ্টতা ২৩%। ফলের খোসা সামান্য মোটা ও শক্ত এবং আঁটি পাতলা। আঁটি গড়ে লম্বায় ৭.০ সেমি., পাশে ৪.০ সেমি., পুরুত্বে ২.০ সেমি. এবং গড় ওজনে ৪০.০ গ্রাম হয়ে থাকে। ফলের গড় আহারোপযোগী অংশ শতকরা ৬৭.২ ভাগ। জ্যৈষ্ঠ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আম পাকা শুরু করে। ফল পাড়ার পর পাকতে প্রায় ৫-৭ দিন সময় লাগে। ফলন খুবই ভালো তবে অনিয়মিত। ফল পরিপক্ব হতে (ফুল আসা থেকে) প্রায় চার মাস সময় লাগে। এ জাতের আমের পুরুষ ও উভলিঙ্গ ফুলের আনুপাতিক হার যথাক্রমে শতকরা ৯১.০ ও ৯.০ ভাগ। এই জাতটি দেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা যেতে পারে।

 

ক্ষীরশাপাত আমের সাথে আরেকটি উন্নত জাতের আম হিমসাগরকে অনেক সময় একই বলা হলেও দুইটি আম ভিন্ন। হিমসাগর পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত আম যা ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলাতেও এই আমের চাষ হয়। পাকার পর ক্ষীরশাপাত আমের ওপরের অংশ হলুদ রং ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে হিমসাগর আম পাকার পরেও সবুজাভ হালকা হলুদ রঙের হবে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা এবং ভারতের নদীয়া জেলায় উৎপাদিত হিমসাগর আমের সঙ্গে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায় উৎপাদিত ‘শাদওয়ালা’ বা ‘শাদৌলা’ নামের অতি উৎকৃষ্ট জাতের আমের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। একই কথা ক্ষীরশাপাতের ক্ষেত্রেও বলা যায়। মুর্শিদাবাদের নবাব শাদৌলা আমের সবচেয়ে বড় সমঝদার ছিলেন বলে জানা যায়।

 

আবার অপেক্ষাকৃত একটু দেরীতে পাকা, ক্ষীরশাপাতের চাইতে আকারে বড়, কম স্বাদের ‘বোম্বাই’ ক্ষীরশাকে ‘হিমসাগর’ নামে চালানো হয়। এ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের। চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহরের পুরাতন পুলিস লাইন বাগানের পশ্চিম কোণে একটি বোম্বাই ক্ষীরশার গাছ ছিল। এখন আছে কী না জানি না। ঐ গাছটির নাম পড়ে থাকলেও আমরা কুড়াতাম না। পড়ে থেকেই আবারো মাটির সাথে মিশে যেত। অতএব, ক্ষীরশাপাত কিনতে গিয়ে প্রতারিত হবেন না।

 

এদিকে, ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’ নামে আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট, কালচে সবুজ, স্বাদে একটু বেশী মিষ্টি, আগাম জাতের আরেকটি আম রয়েছে। অনেকে একে ‘রানিপসন্দ্’ নামেও চিনে থাকেন। আসল ক্ষীরশাপাত হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। উভয় জাতের মূল্য ও মান একই পর্যায়ের। ক্ষুদি ক্ষীরশা চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি। এই তিন জাতের আমগুলি প্রায় একই সময়ে পাকলেও, প্রথমে ক্ষুদি ক্ষীরশা, তার পরে ক্ষীরশা পেকে থাকে। আর বোম্বাই ক্ষীরশা পাকে আরও দেরীতে গুটি আমের শেষ দিকে ফজলীর সাথে।

 

তবে ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’-র মহিমা নিয়ে কিছু কথা না বললে তার প্রতি অন্যায়ই করা হবে, কিংবা গল্পটি অপূর্ণই থেকে যাবে।

 

আমের রাজ্য চাঁপাই নবাবগঞ্জের ‘বড়ে’ নবাব হচ্ছে ‘ক্ষীরশা’, আর ছোটে নবাব হলো ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’। এই মন্তব্য আমার একান্ত ব্যক্তিগত। আমি প্রতিবছর বাজার থেকে খুঁজে খুঁজে পছন্দের এই আম কিনে থাকি। চাঁপাই নবাবগঞ্জের আমার বাড়ির পেছনে ‘রাজ্জাক হাজী’র বাগানে অতি প্রাচীন এই জাতের একটি গাছ রয়েছে। প্রতি বছর এই গাছের ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’ আমার খাওয়া চাই-ই চাই। তাই আগে থেকেই লাল নামের পাড়ার এক ব্যাঁড়ালকে (বাগান ব্যবসায়ীরা এ নামেই পরিচিত) ফরমায়েশ দিয়ে থাকি। আগে এই আম দিয়েই আমরা বাইরের জেলার অতিথিদের আপ্যায়ন করে থাকতাম।

এই জাতের আমটি ক্ষীরশাপাত আমের চেয়ে আকারে ছোট, কিন্তু চেহারায় মিল আছে বলে চাঁপাই নবাবগঞ্জের অনেক মানুষ আমটিকে ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’ বলে থাকেন। ছোটবেলায় আম কুড়াতে গিয়ে দেখেছি, এই আমের গাছের নিচে একটি পাকা আম পড়লে, আমটি ফেটে চৌচির হয়ে যেত, আর আঁটি বের হয়ে অন্যত্র ছুটে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেত।

 

কিন্তু কাগজে-কলমে আমটি রানিপসন্দ্ নামে স্বীকৃত। চেনা-জানা আমপ্রেমীরা এটা জানেন। ক্ষীরসার ক্ষুদে সংস্করণ বলে স্থানীয় লোকজন একে ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’ বলে থাকে। আমি আমের রাজ্যের (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) বাসিন্দা বলে ছোটবেলা থেকে আমটি চিনি এবং এর ভক্ত। আমার ধারণা, আমটি তৃপ্ত করতে পারে যেকোনো রসনাবিলাসীকে।

 

রানিপসন্দ্ মানে রানির পছন্দ। রানি তো যা তা জিনিস পছন্দ করেন না। তার পছন্দের জিনিসটি হতে হবে উৎকৃষ্ট মানের। পরিপুষ্ট হয়ে পাকলে এই আমটিও তেমনই উৎকৃষ্ট মানের বলে মত দিয়েছেন আম বিশেষজ্ঞরা। এর এর স্বাদ নিলে নামকরণ যথার্থও মানবেন আপনি। আমপ্রেমীদের কাছে ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’ মানে চাঁপাই নবাবগঞ্জের বিখ্যাত জাত, জি.আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত ক্ষীরশাপাতের ক্ষুদে সংস্করণ। ক্ষীরশার (ক্ষীরশাপাতের সংক্ষিপ্ত নাম) পিছে পিছে চলে এটি। অনেকটা ছোট ভাই-বড় ভাই সম্পর্ক

আমের এই জাতটির গাছ বাগানে খুব কম দেখা যায়। একটা বড় বাগানেও এই জাতের গাছ দু’একটি পাওয়া যায়। তবে মজার ব্যাপার হলো ক্ষুদি ক্ষীরশার গাছে ফলন বেশ ভাল হয়। অনেকটা লিচুর মতো থোকায়-থোকায় ধরে। আকারও প্রায় লিচুর কাছাকাছি।

 

চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বটতলা হাটের পাশে কুমারপাড়ায় বিশু মিঞাদের রয়েছে প্রায় দেড়’শ বছরের এক পুরোনো আমবাগান। পুরোনো গাছের সঙ্গে মাঝারি নতুন গাছও আছে এই ৮০ বিঘার বাগানে। সব মিলিয়ে ২৫০টি গাছের কম নয়। এর মধ্যে ‘ক্ষুদি ক্ষীরশা’ বা রানিপসন্দ্ জাতের গাছ আছে মাত্র চারটি।

 

তবে চিন্তার ব্যাপার হলো, নতুন করে এ জাতের আমগাছ মানুষ খুব একটা রোপণ করছে না। পুরোনো অনেক গাছ কাটাও পড়ছে। এ জন্য বাজারে এ আমের সরবরাহ কম। এভাবে চলতে থাকলে এত ভালো এই জাতটি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুমিষ্ট আঁশহীন এ আমের প্রসার ঘটানো খুবই দরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে এ আমটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘মুক্তায়িত’ করতে পারে। এতে আমটির প্রসার ঘটবে এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

 

পাশাপাশি ক্ষীরশাপাত আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বর্তমানে অনেক বেশি। মোট উৎপাদনের ৩০ ভাগ আম এই জাতের এবং প্রতি বছরই বাড়ছে এই জাতের আমের বাগান। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সুমিষ্ট এই জাতটি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চাষিকে উত্তম কৃষি প্রযুক্তির আলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপদ, বিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটিই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।#

সান/২০

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায় সিসা হোস্ট