# কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ থেকে………………………………………..
শীতের খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনতে মাছ-সবজিতে কুমড়া বড়ির প্রচলন র্দীঘ দিনের। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলি খাবারের মত কুমড়া বড়ির বেশ কদর রয়েছে। মুখরোচক সুস্বাদু এই খাদ্য অতিযত্ন সহকারে শৈব্লিকভাবে তৈরি করে আসছে নওগাঁর আত্রাইয়ের অর্ধশত গ্রামের প্রায় দু-হাজার কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর। শীতের শুরু থেকে চার মাস এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। কারিগররা জানান, বাজারে ডালের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন বিক্রি কম। তবুও বসে নেই এই কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগররা। এই কুমড়া বড়ি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশ- বিদেশে।
জানা যায়, আত্নীয়-স্বজনের হাত ঘুরে সুস্বাদু কুমড়া বড়ি েএখন প্রবাসী বাঙালীদের রসনা তৃপ্ত করছে। এ জেলার মানুষ যারা সৌদি আরব,কাতার,ওমান, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা,ইতালি,ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন তাদের জন্য পাঠানো হচ্ছে এই বড়ি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাত ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিচিতি পাচ্ছে এটি।শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়।গ্রামাঞ্চলের খাল বিল-নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। এই সময়ে মাছের সাথে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন ধরণের সবজি বাজারে ওঠে। আর এই মাছ ও সবজি রান্নাতে ব্যবহার হয় সুস্বাদু কুমড়া বড়ি। সময় আর কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও সুস্বাদু এই কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারে না। তবে সেই চাহিদা পূরণ করছে,আত্রাই সাহেবগঞ্জ পালপাড়া, বান্দাইখাড়া, মির্জাপুর, সমসপাড়া, কালিকাপুরসহ জেলার প্রায় পঞ্চাশটি গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর। পরিবারের কাজের ফাঁকে কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি উপাজনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গ্রামের নারী-পুরুষরা।বাজারে চাহিদা আর স্বাদের ভিন্নতার জন্য চার প্রকারের ডাল মসলা আর চালকুমড়া দিয়ে তৈরি হয় এই কুমড়া বড়ি। বাজারে প্রচলিত এ্যাংকার, মটর, ছোলা ও মাশকালাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয় এই বড়ি তৈরিতে।
স্থানীয়রা জানান, আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জপালপাড়া গ্রামের প্রায় পঁচিশ-ত্রিশটি পরিবার এ কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সাহেবগঞ্য্জ পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,সরাসরি কুমড়া বড়িতৈরি করে শুকানোর জন্য রোদে দিয়েছেন। আর এ কাজে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও কাজ করছেন। ডাল ভেদে দাম নিদ্ধারণ হয় কুমড়া বড়ির। একশত আশি টাকা কেজি থেকে শুরু করে দুই শত টাকা কেজি পাইকারদের কাছে বিক্রি করলেও খুচড়া বাজারে তিন শত টাকা কেজি দরেবিক্রি হচ্ছে কুমড়া বড়ি। ভোর থেকে উপকরণ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে সূয উঠা পর্যন্ত চলে এইকাজ। শীতের প্রখর রোদে দুই-তিন দিন শুকিয়ে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করা হয় কুমড়া বড়ি। আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ পালগাড়ার কুমড়াবড়ি তৈরির কারিগর শ্রীমতি সুমতিরানী মহন্ত জানান, এই গ্রামে প্রায় বিশটি পরিবার কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ করে আসছেন। সাহেবগঞ্জ পালগাড়ার কুমড়াবড়ি এই অঞ্চলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইর জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। শীতে পিঠাপুলির সাথে তরকারিতে থাকে কুমড়াবড়ি। অন্য একটি স্বাদ যোগ করে এটি। তাই শীতে কুমড়া বড়ির চাহিদা বেড়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, বড়ি তৈরির চাল কুমড়ার সাথে ডালের যেমন নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তেমনি রান্নার সময় কুমড়া বড়ির সাথে মিঠাপানির মাছ থাকলে অনন্য হয়ে ওঠে। এই কুমড়া বড়ি যে কোন ঝোলের মাছের তরকারি হিসেবে ব্যবহার হয়।
সাহেবগঞ্জ গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর শ্রীমতি শিখারানী মহন্ত বলেন,প্রায় দুই যুগ ধরে এই পেশায় আছি। একটা সময় অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আগে সারাদিন ডাল ভিজিয়ে রেখে শিল-পাটা দিয়ে বেটে তৈরি করতে হতো। এত সময় লাগতে অনেক বেশি। এখন শিল-পাটার বদলে মেশিনে ভাঙ্গানো হয়। পরে বড় গামলা বা বালতিতে ডালের গুড়া, পাকা চালকুমড়া, কালোজিড়া, গোলমরিচ এবং সমলা মিশিয়ে সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। এখন প্রতিদিন দুই শত থেকে তিনশত কেজি বিভিন্ন প্রকারের ডাল ব্যবহার হচ্ছে কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে।
কুমড়া বড়ির কারিগর শ্রীমতি শিখারানী মহন্ত আরো বলেন, দুই টাকা কেজি থেকে শুরু করে আজ পনর টাকা কেজিতে বড়ি তৈরি করছি। দুই যুগের অভিজ্ঞতা আমার কাজের। শীতের এই চার মাস আমাদের ঘরে বসে কাজ করে একটু বাড়তি আয় হয়। প্রতিদিন পাঁচ শত থেকে ছয় শত টাকা আয় হয়। মাসে পনর থেকে বিশ হাজার টাকা আমরা পাই। টি দিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে থাকি।#