# আকবর সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের প্রধান সেনাপতি বহু অপকর্মের হোতা আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান সাজুকে শেল্টার দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন। ভর্তি আছেন স্থানীয় একটি হাসপাতালের আইসিইউতে। এসময় সাজু ও আকবর বাহিনীর তাণ্ডবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রসুলবাগ কানাপট্টি এলাকা। ককট্রেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
গত শুক্রবার রাত ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত দফায় দফায় ঘটে দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে উভয় পক্ষের আহত হয় আন্তত ১৫ জন। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ আড়াল করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সাজু ও আকবরের লোকজন। রসুলবাগ পঞ্ছায়েত কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি নেতা রিয়াজউদ্দিন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান সাজুর লোকজন শুক্রবার বিকেল থেকে বন্ধকৃত আনমন প্যাকেজিং কারখানা থেকে ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। সন্ধ্যার দিকে পঞ্ছায়েত কমিটির লোকজন ও এলাকাবাসী মালামাল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চায়। তখন সাজু থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকবরকে ফোন দেয়। পরে আকবর হোসেন ১৫-২০ জন লোক নিয়ে কারখানার সামনে গিয়ে পঞ্ছায়েত কমিটির লোকজনের সাথে তর্ক বিতর্ক হয়। এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদের উপর হামলা চালায় সাজু লোকজন । এতে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে আকবরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে সাকিব (১২), মোরশেদা (১৩), আল-আমিন, মনোয়ার হোসেন মনা, রুদ্র ও হানিফের নাম জানা গেছে।
পরে রাত ১০ টার দিকে আকবরের ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেন রনির নেতৃত্বে কয়েক শতাধিক লোক রসুলবাগ এলাকায় গিয়ে ককট্রেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে কারখানার আশপাশ এলাকার বিভিন্ন দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে হামলা চালায়। কুপিয়ে কেটে ফেলে বহু দোকানের শাটার।
এসময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা এলাকায়। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে শুক্রবার কারখানা থেকে মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান সাজু ও তার ভাগীনা। এ খবর পেয়ে আমরা মালামাল নেওয়ার বিষয়টি কারখানা মালিকপক্ষ জানেন কিনা জানতে চাই। তার কিছুক্ষণ পরই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ নেতা সাজুকে রক্ষা করতে ঘটনার প্রকৃত কারণ আড়াল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতা অভিযোগ জানায়, শাহজাহান সাজু নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডের ভূমিদস্যু চক্রের নেতা। সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের প্রধান সেনাপতি সাজু। বাদলের ছত্রছায়ায় বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে সাজু এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করে আসছে। মালিক হয়েছে কোটি কোটি টাকার। এলাকায় নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল একাধিক বহুতল বাড়ি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কাউন্সিলর বাদল ও তার বহু লোক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও বিএনপি বড় নেতাদের ম্যানেজ করে সাজু রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বিএনপি,র শেল্টারে সাজু এখনো এলাকায় বীর দর্পে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কাউন্সিলর বাদলের অবৈধ আয়ের সকল উৎস নিয়ন্ত্রন করছে সাজু। তাকে শেল্টার দিচ্ছে বিএনপি নেতা আকবর। এসব অবৈধ আয়ের উৎস থেকে মোটা অংকের ভাগ পেয়ে বিএনপি নেতাকে সাজুকে এলাকায় ঠিকিয়ে রাখতে অতন্ত্রপ্রহরী হিসেবে দায়িত্বপালন করছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে আকবরের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে অতিষ্ঠ এলাকার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ হয়েছে থানায়। তবু আকবর বীরদর্পে অপকর্ম করে যাচ্ছে। গত ৩০ অক্টোবর পরিবহন টিকিট কাউণ্টার দখল করতে গিয়ে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেনের লোকজনের ধাওয়া খেয়ে পালিয়েছিল আকবর ও তার ছেলে রনি। আকবরের এসব কর্মাণ্ডে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। অনেক বিএনপি নেতা মনে করছেন এসব ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে শুক্রবার রাতে।
বিএনপি নেতা আকবর হোসেনের ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেন রনি জানান, তার পিতা প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। তার অবস্থা গুরুতর। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আল মামুন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।#