মোঃ সুমন হোসেন……………………….
রাজশাহীতে ৯৫২ পুকুর সংরক্ষণে হাইকোর্টের নির্দেশ দ্রুত কার্যকরের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জনউদ্যোগ রাজশাহী। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর আলুপট্টি জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান আলী বরজাহান’র সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জনউদ্যোগ রাজশাহীর সদস্য সচিব জুলফিকার আহমেদ গোলাপ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রাজকুমার সরকার, আদিবাসি নেতা, আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, নারী নেত্রী সেলিনা বানু, সাংস্কৃতিক কর্মী সন্তোষ কুমার, সমাজ সেবক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক, আদিবাসী যুবনেতা অনিল রবিদাস ও সজল রবিদাস প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, রাজশাহী মহানগরীর পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ পরিণতির দিক লক্ষ্য রেখে মহামান্য হাইকোর্ট গত ৮ আগষ্ট এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এ রায়ে রাজশাহী নগরীর ৯৫২ পুকুর অক্ষত ও প্রকৃত অবস্থায় রেখে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত সেখানে যাতে আর কেউ কোনো পুকুর দখল বা মাটি ভরাট করতে না পারে তা সিটি কর্পোরেশন, আরডিএ এবং জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য বিবাদিদের নিশ্চিত করতে বলেছেন। এমনকি রাজশাহীর অনেক পুরাতন দিঘির দখলকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, আদালতের এই নির্দেশ ফের কাগুজে বাঘ হয়ে না যায়। সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের উচিত হবে, সার্ভিস রুল মেনে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আইনের শাসন যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। মহামান্য আদালতের নির্দেশকে অশ্রদ্ধা বা অবজ্ঞা করার অর্থই হলো আইনের শাসনকে বিপজ্জনক স্থানে নিয়ে যাওয়া। এতে সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। আস্থার সংকট তৈরি হবে।
পুকুরের শহর বলে খ্যাত রাজশাহীর পরিবেশ একসময় নির্মল ছিল। সুষম আবাহওয়া বিরাজ করতো। কিন্তু পুকুর বিভিন্ন ধরনের জলাশয় ভরাট, সবুজ এলাকা ধ্বংস সহ আরো কিছু কারণে আশস্কাজনকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় হতে থাকে। এর সাথে যোগ হয় ভারতের ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাব। এতদাঞ্চলের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হতে শুরু করে। গরমের সময় প্রচন্ড গরম আর শীতকালে প্রচন্ড শীত অনুভূত হয়।
আশির দশকের পর থেকে আইন লংঘন করে শুরু হয় একের পর এক পুকুর দখল ও ভরাটের মহোৎসব। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে থাকে। মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। তাপদাহ বৃদ্ধিও পায়, পাল্লা দিয়ে বাড়তে খাকে খরা। তীব্র গরমেও বৃষ্টির দেখা মেলে না। মাটি হারাতে থাকে আর্দ্রতা। দেখা দেয় পানির অভাব। এই পানির অভাবে মাটি আরো বেশি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উপরের বাতাসকে উষ্ণ করে ক্রমান্বয়ে গরম বৃদ্ধি পেতে পেতে চরম পর্যায়ে চলে আসে। এই অবস্থায় পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে বার বার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়না।
প্রশাসনের নাকের ডগায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েক বছর শত শত পুকুর ভরাট করে বাড়ি ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ২০১৪ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পুকুর ভরাট বন্ধ করার জন্য পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এর পক্ষে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কতগুলো পুকুর আছে তা জানতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক রাজশাহী শহরে ৯৫২ টি পুকুর আছে বলে প্রতিবেদন পাঠান জেলা প্রশাসক। এরই মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্লট করে বিক্রির জন্য সংরক্ষিত দিঘি ভরাট শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ সংযুক্ত করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সব পুকুর সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেন । আবেদনের উপর শুনানি শেষে জারিকৃত রুল যথাযথ ঘোষণা করে উক্ত যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করা হয়।
সংবিধানে বলা আছে প্রশাসন এবং জনগণ সবাই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। রায় বাস্তবায়ন না হলে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা যায়। সুপ্রিম কোর্ট একটা রায় দিলে সেটা পাবলিক ডকুমেন্ট হয়ে যায়। রাজশাহীবাসি আশা করে বিশেষ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা যেন নগরীর ৯৫২ টি পুকুরসংক্রান্ত হাইকোর্টেও নির্দেশনা দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।#