
এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ, পাবনা জেলা প্রতিনিধি: সারাদেশের ন্যায় পাবনা জেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে তিনদফা যৌক্তিক দাবী আদায়ের জন্য কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের মত কর্মসূচি।
পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের ৭১ নং ফৈলজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৩ নং পবাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৭ নং নেংড়ী কৃঞ্চরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন কালে দেখলাম যে, নিমোক্ত তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলছে কঠোর কর্মসূচি।
১) সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৩ তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা। ২) চাকুরীর ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতম গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দ্রুত নিরসন করা। ৩) সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শত ভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান। বর্তমান সময়ে বড়ই অনুতাপ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, সরকারের কিছু অযাচিত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করার অপেক্ষা রাখেনা সচেতন মহল। অনুধাবন যোগ্য বিষয় এই যে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক পদ হতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য স্বপ্ন দেখাটা কোন দোষের নয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ সুদীর্ঘ সময় চাকুরি করে থাকেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে সহকারী শিক্ষকগণ তাদের সুদীর্ঘ চাকুরী জীবনে প্রধান শিক্ষক পদেপদোন্নতির আবেদন করবেন এটাই স্বাভাবিক, প্রধান শিক্ষক হবেন এটাই স্বাভাবিক।
সুদীর্ঘ কাল চাকুরী করার ফলে সহকারী শিক্ষকগণ অভিজ্ঞতার রসদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেন। পদোন্নতির ধাপ গুলো পূর্ণ করে প্রধান শিক্ষক হয়ে তাদের দীর্ঘ কর্ম অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগাতে পারেন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় সহকারী শিক্ষকগণ প্রধান শিক্ষক হয়েছেন ও চাকুরী জীবনে ভালোভাবে সময় দিয়েছেন। সম্প্রতি কালে সংগত কারণে হাজার হাজার সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। ফলশ্রুতিতে শিক্ষক নিয়োগকালে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে মন্ত্রণালয় হতে শতভাগ পদোন্নতির প্রস্তাব দেয়া হলেও নিয়োগ বিধি পরীক্ষণ সংক্রান্ত উপকমিটির সভায় বিষয়টি অনুমোদন না করে পূর্বের অনুপাত নির্ধারণ এর সুপারিশ করা হয়। এ আলোকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুসৃত না হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ তিন দফা দাবি আদায়ের নিমিত্তে লাগাতার কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের মত কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করেন।
আপাতদৃষ্টিতে যদিও সহজবোধ্য ভাষায় লাগাতার কর্মবিরতি বিষয়ে সাধারণ মানুষ ও অভিভাবক মহলে খারাপ প্রতিক্রিয়া ঘনীভূত হলেও সহকারী শিক্ষকগণের এছাড়া আর বিকল্প পথ নেই। যে শিক্ষকদের রক্ত ঘাম মেধা পরিশ্রমে ছোট শিশুটি হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী, পড়ুয়া,পাঠক। সেই শিক্ষককে তার নায্য দাবী থেকে সুকৌশলে দুরে সরিয়ে রেখে কিভাবে সুশিক্ষা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব? একজন শিক্ষকের হাতে খড়ির মাধ্যমে আমরা আজকের সভ্য সমাজে সুশীল বিবেকবান, সুশিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠেছি! অথচ সেই হাড়ি খড়ি দেওয়া শিক্ষক দের কে যদি তাদের নায্য দাবী দাওয়া হক, অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয় তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা কলুষিত হবে। সরকার বাহাদুর তথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবী মেনে নেওয়ার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় , শিক্ষা সচিব মহোদয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের বোধোদয়ের প্রতি গভীর পর্যবেক্ষণ কামনা করছে শিক্ষকরা।
শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে অচিরেই পরিপত্র প্রকাশ করার বিনীত অনুরোধ । নচেৎ লক্ষ কোটি প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মনে বিরুপ প্রভাব পড়বে, অভিভাবকেরা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবে অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে দেশ ও রাষ্ট্রের। পরিশেষে, আত্মসম্মানবোধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিনদফা যৌক্তিক দাবী মেনে অচিরেই তাদেরকে কে কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জন নামক অসৌজন্যমূলক কাজ থেকে স্বাভাবিক পরিবেশ দানের অনুকুল পরিবেশ তৈরী করে দিতে সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ প্রদর্শনের অনুরোধ করছি। যাতে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগন অতিদ্রুত কর্ম বিরতি-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচী প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফেরেন।#